স্বাস্থ্যঃ

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সুফি সঙ্গীতের ব্যবহার করা হচ্ছে তুরস্কের হাসপাতালে।

ডাক্তার বিনগুর সোনমেজ একজন কার্ডিয়াক সার্জন।  তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার অংশ হিসেবে সুফি সংগীত ব্যবহার করে আসছেন।  

তুরস্কের বিখ্যাত শহর ইস্তাম্বুলের মেমোরিয়াল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট(আইসিইউ) আর দশটা আধুনিক হাসপাতালের মতই দেখতে। কিন্তু এখানে থাকা রোগীদের অন্য হাসপাতালের তুলনায় ভিন্নভাবে পরিচর্যা করা হয়।

ডাক্তার বিনগুর সোনমেজ আইসিইউতে থাকা রোগীদের ঐতিহ্যবাহী সুফি সঙ্গীত শোনান। এক্ষেত্রে তিনি নিজেই বাঁশিতে সুফি সঙ্গীতের সুর তুলে তার রোগীদের শুনিয়ে থাকেন।  

ডাক্তার সোনমেজ বলেন, ‘ আইসিইউতে আমরা রোগীদের শান্ত রাখতে সুফি গানের সুর শুনিয়ে থাকি। এই সুর তাদের আরো ভালো থাকতে সাহায্য করে। ’

উল্লেখ্য, সুফিবাদ ইসলামের একটি মরমী শাখা। এটি ইসলামের আধ্যাত্মিক একটি দর্শন। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই এই দর্শনের মূলকথা।   

এদিকে ঐতিহ্যবাহী সুফি সঙ্গীতের প্রতি তুর্কিদের বিশেষ অনুরাগ রয়েছে। এই বিষয়ে ডাক্তার সোনমেজ জানান, ৫ শত বছর আগে ইউরোপে মানসিক রোগীদের জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলতো, অথচ সেই সময়ে উসমানীয় সাম্রাজ্যে তাদের ভিন্ন পদ্ধতিতে নিরাময়ের চেষ্টা করা হতো।   

তিনি বলেন, ‘ উসমানীয় শাসনামলে আমাদের দেশে মানসিক রোগীদের সঙ্গীতের সাহায্যে নিরাময়ের চেষ্টা করা হতো। বর্তমানেও তাই করা হচ্ছে। ’     

এধরনের একটি চিকিৎসা পদ্ধতি শেষে অ্যানেসথেশিয়াসিস্ট এরল জান বলেন, বাঁশিতে সুফি গানের সুর শোনার পর রোগীর হৃদস্পন্দন শতকরা ১৫ভাগ কমে গিয়েছে।  তিনি জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানও সঙ্গীতের সাহায্যে রোগ নিরাময়ের বিষয়টি সমর্থন করে।

তিনি উল্লেখ করেন, তাদের হাসপাতালে যেসব রোগী আছেন তাদের মধ্যে ২০ জনকে বেছে নিয়ে তারা সঙ্গীত থেরাপি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে এসব রোগীর মানসিক চাপ অনেক কমে গেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।  

এরল জান আরো জানান, সঙ্গীত থেরাপির দেয়ার পর রোগীর হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং অক্সিজেন সরবরাহ সব কিছুই অনেক ভালো অবস্থায় পাওয়া গেছে।      

এদিকে গবেষক এবং চিকিৎসকরাও উদ্বেগে আক্রান্ত রোগীর উপর গানের প্রভাব দেখতে পেয়েছেন।  যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ডের একটি ক্লিনিকের স্নায়ুবিজ্ঞানী দামির জানিগরো জানান, তিনি গবেষণা করে দেখেছেন মস্তিষ্কের অপারেশন চলার সময় গানের সুর রোগীদের উপর প্রভাব ফেলে।  

দামির জানিগরো বলেন, ‘ অপারেশন কক্ষে সঠিক সঙ্গীত ব্যবহার করলে রোগী অনেক বেশি নিরুদ্বেগ থাকে।  ফলে রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাড়তি কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় না। এছাড়া এধরনের থেরাপিতে রোগীর দ্রুত আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে তাকে বেশি সময় হাসপাতালেও থাকতে হয় না।’  

অবশ্য স্নায়ুবিজ্ঞানী জানিগরো তার গবেষণায় আইপডের মাধ্যমে রোগীদের গানের সুর শুনিয়েছেন।  অপরদিকে ডাক্তার সোনমেজ এবং অ্যানেসথেশিয়াসিস্ট এরল জান সরাসরি বাঁশির সাহায্যে সুফি গানের সুর শুনিয়েছেন তাদের রোগীদের।

-ডিকে

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily