ডেস্ক রিপোর্টঃ
“সম্মিলিতভাবে, আমরা পারবো সীসা দূষণ রোধ করতে” এই প্রত্যয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ইউএসএআইডি, ওএকে ফাউন্ডেশন, সুইস এজেন্সি ফর ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড কর্পোরেশন এসডিসির সহযোগিতায়, পিওর আর্থ বাংলাদেশ একটি ভার্চুয়াল কর্মশালার আয়োজন করে।
‘Advancing a Lead Pollution and Health Roadmap for Bangladesh’ শীর্ষক এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল সরকারি, বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গবেষকসহ বিভিন্ন অংশীদারদের সীসা দূষণ রোধে একসাথে কাজ করার অহবান জানানো এবং যেসমস্ত উৎস থেকে সীসা দূষণ হয় সে সম্পর্কে গবেষণার আলোকে আলোচনা করা, এবং এর মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতে যৌথভাবে সীসা দূষণ কমাতে দীকনির্দেশনামূলক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন যার মধ্যে জোর দিয়ে বলেছেন যে সীসা দূষণ রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে মাল্টি-সেক্টরাল পন্থায় কাজ করার বিষয়ে। এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে সীসা দূষণের উৎসের তালিকা তৈরি করা, বড় পরিসরে গবেষণা করা, এবং নির্দিষ্ট সময়-সীমা উল্লেখপূর্বক কার্যকরী পদক্ষেপ হাতে নেওয়া। সীসা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের স্বাস্থ্য ও পেশাগত ঝুঁকির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। রঙ্গক বা পিগমেন্ট হিসেবে লেড বা সীসা ক্রোমেট আমদানির বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রকের তদারকি প্রক্রিয়া বৃদ্ধি, এবং কার্যকর উপায়ে শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
বাংলাদেশ হলো বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ যা সীসা দূষণ দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। সীসা দূষণের শিকার হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার তালিকায় চতুর্থ অবস্থা রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ৩৬ মিলিয়ন শিশু সীসা দূষণের শিকার যাদের রক্তে সীসার পরিমাণ ৭.৫ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রস্তাবিত নিরাপদ মাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। এই পরিস্থিতি কে করোনা মহামারির সাথে তুলনা করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনাব আহমেদ শামিম আল রাজি, অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেন যে, “করোনা এবং সীসা দূষণ হলো নীরব ঘাতক।” তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আশ্বাস দেন যে, দেশ থেকে সীসা দূষণ নির্মূল করা তার মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রাধান্য। তিনি আরও বলেন, “পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মূল ভূমিকা পালন করবে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানালয়ের সহযোগিতায়। আমাদেরকে মাল্টি-সেক্টরাল পন্থা অবলম্বন করতে হবে সীসা দূষণ রোধে।” পুরনো ব্যাটারির অবৈধ ও অনিরাপদ পুনঃচক্রায়নকে অনানুষ্ঠানিক থেকে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার কার্যকরী উপায় খুঁজে বের করার জন্য গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কে তিনি এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান। একইসাথে তিনি বলেন যে, “আমাদেরকে সীসা দূষিত লোকালয়গুলো খুঁজে বের করতে হবে যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে এবং সেগুলোকে পরিষ্কার করে পুনরায় নিরাপদ অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে।”
সীসা দূষণের পরিধি বিস্তৃত। পুরনো ব্যবহৃত লেড এসিড ব্যাটারি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন দিনের খাবারের মশলা বিশেষ করে হলুদে, লেড-যুক্ত দেয়াল পেইন্ট, প্রসাধনী, রান্নার জন্য অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িপাতিল, আয়ুর্বেদীক-সহ ইত্যাদি। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব আশরাফ উদ্দিন, মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর বলেন, “আমরা নিজেদের অজান্তের খাচ্ছি, নিঃশ্বাস নিচ্ছি বিষাক্ত সীসা। দেশের সাধারণ মানুষ এবং আমাদের সকলের পরিবার, পরিজন সকলের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া ও এ বিষয় নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। কীভাবে নিত্যদিনের মশলা ও খাদ্যদ্রবাদীর সাথে, প্রসাধনীসহ অন্যান্য মাধ্যমে সীসা আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এ বিষয়ে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মানুষের দেহে ও পরিবেশে এর ক্ষতি অপূরণীয়।”
সীসা দূষণ শুধুমাত্র পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি শিক্ষা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং সহিংসতা এবং জলবায়ু বিষয়ক সমাধানগুলিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদি সমস্যা অনেক বিস্তর কিন্তু এর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে ধারাবাহিকতা ও সমন্বয়ের অভাব।এই বিষয়টিকে তুলে ধরে অ্যান্ড্রু ম্যাককার্টার, ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্ট্রেটিজি অ্যান্ড পার্টনারশীপ, পিওর আর্থ বলেন যে, “এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারকে জাতীয় কৌশল প্রণয়নে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে জাতীয় পর্যায়ে সীসা দূষণ রোধে পরিকল্পনার জন্য আমাদের লক্ষ্য এবং কৌশলগুলির সমন্বয় করে সম্মিলিতভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “সীসা যদি মাটি দূষণ করে সেটা শতবছর ধরে মাটিতে বিদ্যমান থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই সীসা দূষণ দ্বারা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।”
অংশগ্রহণকারী এবং বক্তারা লেড এসিড ব্যাটারির পুনর্ব্যবহার বা রিসাইকেল করার প্রক্রিয়াকে অনানুষ্ঠানিক থেকে আনুষ্ঠানিক খাতে স্থানান্তর করার, এবং আইনের প্রয়োগ, যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন। সীসা দূষণ সম্পর্কে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার এবং গণমাধ্যমের সহায়তায় এবিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।