অর্থনীতিঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ষাটোর্ধ সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
যুগান্তকারী ও মহৎ এ উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিচবশেষভাবে ধন্যবাদ এই জন্য যে, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চারবারের নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘প্রাক্-বাজেট আলোচনা’য় প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ‘সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করার জন্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনপূর্বক লিখিত প্রস্তাব পেশ করেছিল।
এ ছাড়া বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তার ২০২০-২১ অর্থবছরের ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা’য় ‘প্রবীণ হিতৈষী বিভাগ’ নামে নতুন একটি খাত সংযুক্ত করে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল (বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২০-২১, পৃষ্ঠা ১৪৮)।
উক্ত প্রস্তাবের যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ সহস্র অর্থনীতিবিদদের একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’ প্রধানমন্ত্রীর ভ‚য়সী প্রশংসা করছে।
উল্লেখ্য, গণমানুষের অর্থনীতিবিদ খ্যাত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ২০২০ সালে তাঁর প্রকাশিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন
যে: “আজকের ‘প্রবীণ’ মানুষই ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা। আমাদের সব অর্জনে অবদান রেখেছেন প্রবীণ মানুষ।
সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ‘প্রবীণ নীড়’ গড়ে তোলা সময়ের দাবি। দেশে একদিকে যেমন মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়ছে, তেমনি পুঁজিবাদের ঠেলা-ধাক্কায় বর্ধিষ্ণু পরিবার (extended family) ভেঙে অণুপরিবার (nuclear family) বাড়ছে।
বাড়ছে অসহায়-দুঃস্থ-নিঃসঙ্গ প্রবীণ মানুষের সংখ্যা। সেইসাথে কভিড-১৯-এর মহাবিপর্যয়ে আগের তুলনায় অনেক বেশি পর্যুদস্ত হচ্ছে প্রবীণ মানুষের জীবন।
এতে করে অনেক প্রবীণ মানুষ, বিশেষত দরিদ্র-নিম্ন বিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রবীণদের আশ্রয়হীন-ভঙ্গুর হবার সম্ভাবনা অতীতের তুলনায় বহুগুণ বাড়ছে। সামনে আরো বাড়বে। আর এসব যৌক্তিক কারণেই প্রবীণ মানুষদের জন্য ‘প্রবীণ নীড়’ (‘বৃদ্ধাশ্রম’ নয়) গড়ে তোলা জরুরি। বিষয়টি বাজেটে অগ্রাধিকারযোগ্য। আমরা এ জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘প্রবীণ হিতৈষী বিভাগ’ নামে নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সে জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করছি।”
“কভিড-১৯-এর অভিঘাতে দেশের আর্থসামাজিক শ্রেণিকাঠামোতে আমূল অধোগতির ফলে মানুষ নিঃস্বতর হয়ে শ্রেণি মইয়ে দ্রুত নিচের দিকে নামছেন। মানুষের জীবনকে সম্মান ও শ্রদ্ধাশীল করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব-কর্তব্য। এ নিরিখে ভবিষ্যতের জীবনকুশলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্বজনীন পেনশন বিষয় নিয়ে এখনই ভাবনা জরুরি। বিষয়টি আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
সরকার এ নিয়ে কার্যকর কী কী পদক্ষেপের কথা ভাবছেন তার সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা-বিবরণী আসন্ন বাজেটে থাকাটা হবে সময়োপযোগী, ন্যায়সঙ্গত এবং সাংবিধানিক প্রতিশ্রæতির প্রতি শ্রদ্ধার প্রতিফলন।” (পৃষ্ঠা নম্বর ২৭৬-২৭৭)। সরকারের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রবীণদের জন্য সার্বজনীন পেনশন ভাতা সম্পর্কিত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সময়োপযোগী ও যৌক্তিক প্রস্তাবসমূহের পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ঘটবে সেটাই সবার প্রত্যাশা।
এখানে উল্লেখ করা উচিত যে, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি-ই সর্বপ্রথম ২০১২ সালে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের নেতৃত্বে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত হাজির করে ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু’ নির্মাণের প্রস্তাব করেছিল। নিজস্ব অর্থায়নে যে পদ্মা সেতু করা সম্ভব, সেটা বাংলাদেশ প্রমাণ করে দেখিয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আপামর মানুষের প্রকৃত উন্নয়নে বিশ্বাসী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি মনে করে, পদ্মা সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল এবং প্রবীণদের জন্য সার্বজনীন পেনশন সুবিধা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলে দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে লক্ষণীয় অগ্রগতি ঘটবে।
প্রবীণদের জন্য সার্বজনীন পেনশন সুবিধা প্রবর্তনের সরকারি ঘোষণার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি আপনার বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক প্রচার করে দেশের জনগণকে অবহিত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
-শিশির