বিশেষ প্রতিবেদনঃ

পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’ কর্তৃক শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার লক্ষ্যে ১৯ সপ্টেম্বের ২০২১ সকাল ১০:৩০টায় রংপুর সিক্স সিজন হোটেলের অডিটরিয়ামে একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম সচিব) এবং সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের উপপরিচালক জনাব মোঃ মিজানুর রহমান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্রেট জনাব এ.ডাব্লিউ. এম. ওায়হান শাহ, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব আবু মারুফ হোসেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মাঝহারুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. তুহিন ওয়াদুদ প্রমুখ।

প্রশিক্ষণের শুরুতে প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি সম্পর্কে তথ্য উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জনাব খন্দকার মাহমুদ পাশা।

উপস্থিত সবাইকে অবহিত করা হয় প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৯৫২০০ জন শিক্ষার্থী, পরিবহন চালক/শ্রমিক, জনকারখানা ও নির্মাণ শ্রমিক, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও পেশাজীবি, ব্যবসায়ী, ইমাম, শিক্ষক এবং বেসরকারি সংস্থা’র প্রতিনিধিকে শব্দসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

প্রধান অতিথি জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম সচিব) তার বক্তব্যে বলেন, আজ বাংলাদেশের যত অর্জন যেমন, বাল্য বিবাহ নিয়ন্ত্রণ, এসিড নিক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার প্রসার, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সেবার প্রসার ইত্যাদির ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ সহ এনজিওদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকার কোন উদ্যোগ নিলে সেটি সফল করার জন্য স্থানীয় জনগণের অন্তর্ভূক্তি অত্যন্ত জরুরী।

শব্দদূষণের মতো ক্ষতিকর একটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এটি সফল করার জন্যও স্থানীয় জনগণকে এগিয়ে আসতে আসতে হবে।

এনজিও তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি শব্দদূষণ বিষয়ে প্রচারণামূলক কাজ অব্যহত রাখবে সে বিয়য়ে এনজিও প্রতিনিধিগণের নিকট আহবান করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্রেট জনাব এ.ডাব্লিউ. এম. ওায়হান শাহ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি সময় উপযোগী প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য প্রকল্প পরিচালক মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি মন্তব্য করেন যে, আইন প্রয়োগের পূর্বে প্রচারণা প্রয়োজন। তাই নীরব এলাকা বাস্তবায়নে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন তাই এনজিও প্রতিনিধিসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব আবু মারুফ হোসেন বলেন, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করে হর্ণ বাজানো থেকে বিরত থাকার আহবান করেন।

রংপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ঘোষিত নীরব এলাকা বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মাঝহারুল ইসলাম শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে বলেন, দীর্ঘ সময় উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্য সৃষ্টি হয়। হাইড্রোলিক হর্ণ ৯৫ ডিসিবল শব্দ তৈরি করে যা শিশুদের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

বক্তারা তাদের আলোচনায় কিছু উল্লেখযোগ্য সুপারিশ উপস্থাপন করেন,

১। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রচারণা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। চিকিৎসক ও সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গ তাদের চেম্বারে, ভিজিটিং কার্ডে ও অফিসিয়াল পেডে শব্দদূষণ বিষয়ক বার্তা প্রচার করলে অনেক বেশি কার্যকরী হবে

২। তরুন সমাজকে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক বিষয়ে সচেতন করতে হবে

৩। নীরব এলাকা সম্পর্কে আরো বেশি প্রচারনা প্রয়োজন

৪। আবাসিক এলাকায় দিন দিন জেনারেটরের শব্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিতে হবে

৫। মাইক ব্যাবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা নিশ্চিত করতে হবে

৬। শহরের মধ্যে মোটরসাইকেল ও এম্বুলেন্সের বিনা কারণে হর্ণ বাজানো বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে

৭। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে
৮। এনজিওগুলো তাদের নিয়মিত কর্মসূচির সাথে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রচারণা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

প্রশিক্ষণের সভাপতি পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের উপপরিচালক জনাব মোঃ মিজানুর রহমান উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. তুহিন ওয়াদুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জনাব গোলাম সাজ্জাদ হায়দার, শব্দদূষণ প্রতিরোধ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জনাব ইউনুস আলী মোল্লা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, রংপুরের সাধারণ সম্পাদক রুমানা জামান, ডরপ এর নির্বাহী পরিচালক জনাব এসএম মেরাজ উদ্দিন, এমজেএসকে প্রতিনিধি জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালের সহকারি নির্বাহী পরিচালক জনাব ইলিয়াস আলী, পলিসির প্রতিনিধি মতিয়া বেগম, নীলকন্ঠের নির্বাহী পরিচালক শারথী রানি সাহা এডাব এর সদস্য সচিব জনাব মোঃ আহসান হাবীব, মুসলিম এইড এর রিজিওনাল ম্যানেজার জনাব আবুল হাসান, আরডিআরএস প্রতিনিধি রবিন্দ্র চন্দ্র মন্ডল, এমযেইউএস নির্বাহী পরিচালক মুস্তাক আহমেদ প্রমুখ।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily