অনলাইনঃ
রেলওয়ের পোষ্য ও জেলা কোটা পূরণ না করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রেলওয়ের প্রকাশিত ৮৬৫ জন খালাসির ফলাফল বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি প্রত্যাখান করছে এবং অসহায় ও দরিদ্র রেল পরিবারের অন্তত একজন পোষ্যকে উক্ত ফলাফলে অন্তর্ভূক্ত করে ফলাফল প্রকাশের জন্য জোর দাবী জানাচেছ ।
২০১৩ সালের ৮৬৫ জন খালাসির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারীর প্রায় ৭ বছর পর গত ১১/০৫/২০১৯ ইং রোজ শনিবার সরকারি ছূটির দিন বিকাল আনুমানিক ৪.৩০ টার সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম সিআরবি কার্যালয় দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন নিয়োগ কমিটি।
নিয়োগ কমিটির একজন মৃত্যুবরণ করেছিলেন, আরেকজন ক্যাডার পরিবর্তন করেছেন। সাবেক রেল মন্ত্রীর চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত না মানায় ২ জন মহা ব্যবস্থাপক (জিএম)কে বদলী করা হয়েছিল। নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে কোটি কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের গুঞ্জন রয়েছে রেলওয়ে অঙ্গনে। মামলা হয়েছিল বেশ কয়েকটি। নানা সমীকরণ ও জটিলতার মধ্য দিয়ে গত শনিবার ছুটির দিনে প্রকাশিত হ’ল ৮৬৫ জন খালসির ফলাফল।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী তার বাসায় নিয়োগ কমিটির সদসদের এবং জেনারেল ম্যানেজারকে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে চূড়ান্ত তালিকায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ম্যানেজারকে স্বাক্ষর করতে বলেন মন্ত্রী। কিন্তু সেটি বিধি অনুযায়ী না হওয়ায় তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল হাই স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন করেন রেলওয়ের শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গেলেও বর্তমানে অবসরে থাকা তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল হাইকে তাৎক্ষনিক বদলী করে নিয়োগ দেওয়া হয় বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফারুক আহম্মেদকে।
আগেই এই নিয়োগ ইস্যুতে জি.এম মকবুল আহম্মেদকে বদলী করা হয়েছিল। বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার ফারুক আহম্মেদ একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিধি মেনে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছি। রেলওয়ের বিধি অনুযায়ী নিয়োগ কমিটি নিয়াগ কার্যক্রম চূড়ান্ত করে জেনারেল ম্যানেজার কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবেন। জেনারেল ম্যানেজার অনুমোদন দিলেই চাকুরীতে যোগদান পত্র পাঠানো হয়ে থাকে। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য রেলওয়ের নিয়োগ বিধি না মেনে এবং রেলওয়ের পোষ্য কোটা ও জেলা কোটা পূরণ না করেই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বৃহৎ নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি রেলওয়েতে কর্মরত আছে এমন ব্যক্তিদেরকেও পুন:রায় খালসিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে পোষ্য ও জেলা কোটা পূরণ না করেই বহু বিহারীকে (ননবাঙ্গালী) খালাসী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একই পরিবারের ইতোপূর্বে ১৪৪১ জন খালসিতে ছেলে, মেয়ে, জামায়ের চাকুরী হয়েছে। আবার ওই সকল পরিবারের সন্তানদেরই পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ অনেক অবসর প্রাপ্ত, কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী, গরীব-দরিদ্র রেলপরিবারের সন্তানরা গত ১০ বছরে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা দিলেও তাদের কপালে চাকুরী নামক সোনার হরিণটি জোটেনি। বার বার তারাই নিয়োগ বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের কারণে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচেছন। তাদের মেধা থাকা সত্ত্বেও রেলওয়ের নিয়োগ দূর্নীতির কাছে তারা হার মানছে। কর্তৃপক্ষ সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে ফলাফল প্রকাশ করলে কর্মরত থাকা অবস্থায় একই ব্যক্তি খালাসিতে নিয়োগ পেতে পারে না। নিয়োগের আবেদন ফরমে ছিল যে- আবেদনকারীর কেউ রেলওয়েতে কর্মরত আছে কি-না? কিন্তু তারা নিয়োগ দূর্নীতির কারণে তা সঠিকভাবে দেখার প্রয়োজন মনে করে নি। অন্যদিকে প্রকাশিত ফলাফলে কে কোন্ কোটায় নিয়োগ পেয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বিগত সময়ে ফলাফলে তা উল্লেখ থাকতো। অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়োগ বোর্ড ও রেলওয়ের নিয়োগ বাণিজ্যের সিন্ডিকেটে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের ও আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ দিচেছ অসাধু নিয়োগ বোর্ড কর্মকর্তারা। অনিয়মে ভরা এই ৮৬৫ জন খালাসির নিয়োগ ফলাফল বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি অত্যান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। সাথে সাথে অনতিবিলম্বে এই ফলাফল পুনরায় সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে অন্তর্ভূক্ত না করে অসহায় ও দরিদ্র রেল পরিবারের অন্তত একজন পোষ্যকে উক্ত ফলাফলে অন্তর্ভূক্ত করে ফলাফল প্রকাশের জন্য জোর দাবী জানাচেছ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি এ বিষয়ে জাতির জনকের কন্যা নিরীহ জনগণের আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি
-এসএম