মর্গে অবস্থা খারাপ, জায়গা নেই

মর্গে অবস্থা খারাপ, জায়গা নেই
মর্গে অবস্থা খারাপ, জায়গা নেই

মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা আমেরিকাতে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের সংখ্যা একলাখ পচাত্তর হাজারের মত। তারমধ্যে নিউইয়র্কেই আক্রান্ত চুরাশি হাজারের বেশি।

নিউইয়র্কে প্রাণ ঝরেছে সতেরশো আটান্নটি। মর্গে অবস্থা খারাপ, জায়গা নেই। তাই “FEMA’ (Federal Emergency Management Agency) এই সিটিতে ৮৫ টি রেফ্রিজারেটেড ট্রাক দিয়েছে। এসব রেফ্রিজারেটেড ট্রাক চব্বিশ ঘন্টা হাসপাতালগুলোর সামনে অবস্থান করবে।

তাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যারা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই।

অনেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনে কান্নাকাটি করছেন। কেউ আবার মৃত্যুর সময় কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না। আইসিইউতে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাংগন মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড বেলভ্যুর চিকিৎসক কামিনী দ্যুবে।

কামিনী বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা খুব কঠিন সময় পার করছেন। তারা বেঁচে থাকার লড়াই করছেন প্রতি মুুহূর্তে। কিন্তু প্রাণঘাতী ভাইরাসটি তাদেরকে বাঁচতে দিচ্ছেনা। পরিবারের কারোর সঙ্গে তাদেরকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। ডাক্তার কামিনী আরও বলেন, প্রায়ই এমন দেখতে পাচ্ছি , একজন করোনা আক্রান্ত রোগী মৃত্যুশয্যায়। তিনি মারা যাচ্ছেন কিন্তু তার পাশে কেউ নেই। যাদেরকে আইসিইউ’তে রাখা হচ্ছে তাদের আত্মীয় স্বজনদের ভোগান্তি দেখে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করি–“কেন এই পেশায় এলাম?” আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরা তাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনে কান্নাকাটি করছেন। তাদের চোখের পানি দেখা খুবই বেদনাদায়ক। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা মৃত্যুর সময় পরিবারের কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না। এটা খুবই মর্মান্তিক।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা যারা সর্বাত্মকভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তারা দেখছেন পিঁপড়ার দলের মত রোগী হাসপাতালে আসছেন। আমার অভিজ্ঞতায় এর আগে এমন অবস্থা কখনও দেখিনি।কামিনী বলেন, আমি আমার জীবনে কখনও এমন শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়িনি। এত তীব্র দুঃখ অশান্তির মুখে কখনো পড়িনি। যখন প্রাথমিকভাবে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তখন তিনি ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এটি নিউমোনিয়া এবং কারও কারও জন্য অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতাসহ মৃত্যু ডেকে আনছে। বয়স্কদের জন্য করোনাভাইরাস আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চাপ থাকায় এসবের প্রভাব চিকিৎসক নার্সদের উপর পড়ছে। চিকিৎসক নার্সরা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চিন্তিত। ডাক্তার কামিনী বলেন, শহীদ হওয়ার জন্য আমরা চিকিৎসা পেশায় আসিনি। আমরা একটি গুরুতর সংকটে আছি। পারফেক্ট প্রোটেকশন পাওয়া আমাদের প্রাপ্য। আমরা যুদ্ধের ময়দানে নেই। থাকতেও চাইনা। আমাদের পরিবার আছে। তারা আমাদের উপর বেঁচে আছে।

-শিশির

FacebookTwitter