ফিন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিন নিশ্বিতকরনেই বিলটি করা হয়েছেঃ অর্থমন্ত্রী

ফিন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিন

অর্থনীতিঃ
কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বা অশুভ কার্যসম্পাদনের জন্য বিলটি পাস করিনি। আমরা করেছি সততা নিয়ে, সেটি হচ্ছে একটি ফিন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিনের জন্য, জবাবদিহিতা নিশ্বিতকরনের জন্য। টাকা দেয়ার সময় সরকার দেবে আর খরচ করার সময় সরকারের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারবেনা সেটা ঠিক নয়। সরকারকে অবহিত করে সে কাজ করতে হবে। উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার বাধ্যবাধকতা তৈরিতে বিলটি (আইন) প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই করা হয়েছে। সেজন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই যা সরকার থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা নিজেরা নিজেদের ম্যানেজমেন্ট করে তবে তাদের জবাবদিহিতা দরকার। আইনটি যথাযথভাবে করা হয়েছে এবং এটি অর্থনীতিতে ডেফিনেটলি অর্থবহ ভূমিকা পালন করবে। যারা এর বিরোধিতা করেছিল তারাও কিন্তু বেশকিছু সংশোধনী দিয়েছেন পরবর্তীতে কিকারনে যে তারা সেটা তুলে নিলেন সেটা বোধগম্য হলোনা। তারা কিন্তু সংশোধনীতে কেউ কেউ বলছে আরও যেসব প্রতিষ্ঠান এ আইনের বাইরে রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানকেও এর আওতায় আনতে হবে। কিন্তু পরে আবার তারাই বিরোধিতা শুরু করলো, বিষয়টি বোঝা গেল না। আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। উল্লেখ্য যে, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ কোষাগারে নিতে বিল পাস হয়, সেটি সম্পর্কেই তিনি এসব কথা বলেন।

মাননীয় মন্ত্রী আরো বলেন, সরকার ২৫ শতাংশ নিলে বাকি ৭৫ শতাংশ তো তাদের থাকবে। অতিরিক্ত টাকা রেভিনিউ ক্যাপিটাল খরচ বাদ দিয়ে ২৫ শতাংশ রেখে ব্যালেন্সটা রেখে দেবে। এটা হলো একটা জবাবদিহিতার ব্যাপার, টাকার জন্য না টাকার চেয়ে বড় হলো ফিন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিন। ব্যাংকে সারপ্লাস ফান্ড অনেক বেশি, এটি থাকলেও ক্ষতি। যে পরিমাণ টাকা থাকা উচিত সে পরিমাণ থাকা ভালো। ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ করতে পারে এটি নিয়ম আছে। আমাদের ঘাটতি রয়েছে রফতানি বাণিজ্য, ৫ শতাংশের মতো। নেগিটিভ গ্রোথ রয়েছে। বছর শেষে তা থাকবে না। বর্তমানে পৃথিবীতে একটি দেশও নেই যেখানে নেগেটিভ গ্রোথ নেই। সামষ্টিক অর্থনীতি ওভারঅল খারাপ নয়। গতকাল একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, ‘আমি ব্যবসায়ী মন্ত্রী। ব্যবসায়ী মন্ত্রী হওয়ার কারণে তার মতে ব্যবসাটা ভালো বুঝি, টাকা-পয়সা হিসাবটা ভালো বুঝি এবং কখন কার থেকে টাকা নিতে হবে সেটাও ভালো বুঝি। কিন্তু এসব কথা সঠিক নয়। গতকাল সময়ের অভাবে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় বিষয় স্পষ্টকরন সম্ভব হয়নি, তাই আজ এই কথাগুলো বলছি। তিনি এ রকমভাবে পারসোনাল লেবেলে না গেলেও পারতেন। একসময় ব্যবসায়ী ছিলাম, ব্যবসা করা তো অপরাধ নয়, ব্যবসা করেছি ১২ বছর আগে। আমি বলতে বাধ্য হয়েছি, ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এটা বলতে পারলেন, আমি এ বছর সারাবিশ্বের সরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হলাম, এটা তো বললেন না’।

এরপূর্বে সকালে রাষ্ট্রায়াত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) শাখা ব্যবস্থাপকদের সম্মেলনে মাননীয় অর্থমন্ত্রী অংশগ্রহন করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করেছি, কিন্তু খেলাপি হইনি। আপনারা লোন দিচ্ছেন, খেলাপি হচ্ছে। আর খেলাপি হওয়ার কারণে সংসদে কটুক্তি শুনতে হয় আমাকে। মন্দ ঋণ বিতরণে ব্যাংকারদের যারা জড়িত, তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া ব্যবস্থা করতে হবে।

ব্যাংকারদের মধ্যে যারা খারাপ, তাদের বিষয়ে গভর্নর বা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আপনারা নিজেরাই নিজেদের অ্যাসেসমেন্ট করে নিজরাই শাস্তি নির্ধারণ করতে পারেন। তাদের কাছে আমাদের আর কোনো সম্পদ তুলে দিয়েন না। তারা আবার নষ্ট করবে। সুতরাং তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকতে হবে।

দেশের অর্থনীতির চালচিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের পর বিশ্বে এখন একটা অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে। গত বছর এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না যাদের আমদানি-রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এখন আমাদের আমদানি-রপ্তানি কিছুটা নেতিবাচক অবস্থায় থাকলেও বছর শেষে সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ সরকার কিছু সহায়তা দিচ্ছে, সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

ঢাকার মতিঝিলে বিডিবিএল ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই অনুষ্ঠানে বিডিবিএল চেয়ারম্যান মো. মেজবাহউদ্দিন সভাপতিত্ব করেন, আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবীর।

-শিশির

FacebookTwitter