আইন আদালতঃ
কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কথিত সাক্ষাৎকার।
এ ঘটনায় মেজর সিনহার ল্যাপটপ, ক্যামেরা এবং হার্ডডিস্কসহ বেশকিছু আলামত মামলার তদন্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব গাড়িতে থাকলেও কোনোকিছুর কথাই পুলিশের মামলায় উল্লেখ করা হয়নি।
এ নিয়ে গতকাল দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর আগে মেজর সিনহা সেখানে ‘ডকুমেন্টারি’ তৈরির অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ এলাকায় ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত স্বজনদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় বলে দাবি করা হয়। এমনকি যেদিন তিনি হত্যার শিকার হন সেদিনই মাদক চোরাচালান বা ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এমন তথ্যও ছড়িয়ে পড়েছে। এ সাক্ষাৎকারের বিষয়টি প্রদীপের জন্য বিপজ্জনক ছিল এমন মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
এমন তথ্য পেয়েছে র্যাবও। তবে সত্যাসত্য এখনো জানতে না পারলেও র্যাব বলছে, ওসি প্রদীপের দেয়া সেই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এরকম একটি খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তার নজরে এসেছে।’
যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে তদন্ত কর্মকর্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘সিনহা ও সিফাতের সাথে থাকা ল্যাপটপ, ক্যামেরা ও অন্যান্য ডিভাইসগুলোরও সন্ধান চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের মাধ্যমে পুলিশের কাছে সিনহার ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, ক্যামেরা এবং অন্যান্য আলামত চাইব। যদি সেগুলো সিজার লিস্টে না থাকে তাহলে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে র্যাব।’
তিনি বলেন, ‘নিহত হওয়ার আগে সিনহা কারকার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সে বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা খতিয়ে দেখছেন। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না।’
তাছাড়া সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এ বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, সিফাত জামিন না পাওয়ায় এখনো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি।
লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘তদন্তে সিফাত র্যাবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এ কারণে আদালতে তার জামিন এবং পুলিশের দায়েরকৃত দুটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।’
এদিকে সিনহাকে হত্যার ঘটনায় চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা ইলিয়াস কোবরার নামও আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করার কথা জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চলচিত্রের একজন খলনায়কের জড়িত থাকার যে অভিযোগ এসেছে সেটিও তদন্ত কর্মকর্তা খতিয়ে দেখছেন।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাকে গুলি করার দাবি করলেও একে সরাসরি হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন সিনহার স্বজনরা।
স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর বিশ্ব ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন মেজর সিনহা রাশেদ। ভ্রমণবিষয়ক একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরির কাজ করছিলেন তিনি। পরিবার জানায়, এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজারে ভিডিও তৈরির কাজে গিয়েছিলেন সিনহা।
-ডিকে