অর্থনীতিঃ
দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম ২০২০ (বিডিএফ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৯- ৩০ জানুয়ারী, ২০২০ ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনটির উদ্বোধন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে উৎসর্গ করা হয়েছে এবারের বিডিএফ সম্মেলন।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে সামনে রেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এবারের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের মূল স্লোগান ‘ইফেক্টিভ পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’। বিডিএফের উৎপত্তি ১৯৭০ এর দশকে যখন এর নাম ছিল প্যারিস কনসোর্টিয়াম।
৯০ এর দশকে Bangladesh Aid Group এবং পরবর্তীতে Bangladesh Development Forum (BDF) হিসাবে যাত্রা শুরু করে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে।
এবারের সম্মেলনটি হল চতুর্থ সম্মেলন। আজ ৩০ জানুয়ারী ২০২০ ( বৃহস্পতিবার) দুপুরে রাজধানী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিডিএফের সমাপনী ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। আজকের অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মনোয়ার আহমেদ এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ফোরামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বেশকিছু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শীর্ষস্থানীয়রা অংশ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৩৫-৪০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। বৈঠকের মূল অধিবেশনের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ইফেক্টিভ পার্টনারশিপ ফর ইমপ্লিমেন্টিং দি এইটথ ফাইভ ইয়ার প্ল্যান এইমিং টুওয়ার্ডস অ্যাচিভিং এসডিজিস।’ সম্মেলনে কিনোট অধিবেশনসহ মোট নয়টি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম এবার এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে এগিয়ে চলেছে। এখন ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। একইসঙ্গে সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে সরকার। এরই প্রেক্ষিতে এবার ফোরামে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার রুপরেখা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকারের পদক্ষেপসমূহ বা বিভিন্ন আর্থসামাজিক অগ্রাধিকার খাতে সরকারের মধ্যমমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট তুলে ধরা হয়েছে।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী দেশের অগ্রগতি সম্পর্কে আরো বলেন, আমাদের এসকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে অর্থায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাক্কলন অনুযায়ী, দারিদ্র্যের হার ২০২১ সালে ১৭.২ শতাংশ থেকে কমে ২০২৫ সালে ১২.১ শতাংশ হবে। অতি দারিদ্র্যের হার ৮.৩৭ শতাংশ হতে ৫.২৮ শতাংশে নেমে আসবে। মোট বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপি’র তুলনায় ২০২০ সালের ৩২.৮% হতে বেড়ে ৩৭.২% হবে। এর মধ্যে সরকারি খাতের বিনিয়োগ ৮.২ থেকে ৯.০ শতাংশ এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৪.৫ থেকে ২৮.২ শতাংশ হবে। পাঁচ বছর সময়কালে দেশের ভিতরে এবং বাহিরে মোট ১০.৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পরিকল্পনার প্রাক্কলন অনুযায়ী জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে ৮.২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৮.৫১ শতাংশ হবে। আগামী পাঁচ বছরে মেগা প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ব্যবসায় বান্ধব, ম্যানুফ্যাকচারিং-বান্ধব ও রপ্তানি-বান্ধব ট্যাক্স-রেজিম সৃষ্টি করা হবে। সরকারি বিনিয়োগে দেশীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্যমোট রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
পাশাপাশি বিডিএফ সম্মেলন ২০২০ উপলক্ষ্যে জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন সেন মাননীয় অর্থমন্ত্রীর শেরে বাংলানগর কার্যলয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা পারস্পারিক বিভিন্ন বিষয় ও সহযোগীতা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
-শিশির