অনলাইন ডেস্কঃ
পাঁচ এজেন্ডা নিয়ে আজ প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
এ বৈঠকে প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, নির্বাচনী বাজেট, বিষয় ভিত্তিক কমিটি গঠন ও নির্বাচনে অংশ নেয়া শরিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয় নিয়ে বিষদ আলোচনা হবে।
সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে গত ১০টি নির্বাচনের পরিসংখ্যান, বর্তমান এমপিদের হালনাগাদ তথ্য, বিনা ভোটে কারা নির্বাচিত, দলের ও দলের বাইরে কার কী অবস্থান তা তুলে ধরা হবে শেখ হাসিনার সামনে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী কর্মকৌশল নিয়ে ৮০ পৃষ্ঠার প্রোফাইল উপস্থাপন করা হবে। তবে বৈঠকে প্রার্র্থী মনোনয়ন নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছে দলটি। কারণ, এজন্য দলের রয়েছে মনোনয়ন বোর্ড।
সেখানেই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ওই পাঁচটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কমিটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না। শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। দলীয় কোন্দল নিয়ে আলোচনা হবে কি না এ প্রশ্নে তিনি জানান, কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হবে না। কারণ, বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত কাজ করছে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এদিকে বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি ও তা বাস্তবায়নের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
১৬ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান করে ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে আওয়ামী লীগ। এতে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমামকে কো-চেয়ারম্যান এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্যসচিব করা হয়। এ কমিটিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৪১ জন, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ৮১ জন। তবে প্রেসিডিয়ামের দুটি এবং কার্যনির্বাহী সংসদের একটি সদস্য পদ এখনো খালি রয়েছে। ৬ সহযোগী এবং ২ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ১৪০ জন।
নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ২৬ নেতাকে ১৩টি উপ-কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৬৪ জেলা টিম গঠন করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অধিকসংখ্যক নেতার উপস্থিতিতে এটাই প্রথম বৈঠক হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতীতের মতো আওয়ামী লীগের টার্গেট তরুণ ও নারী ভোটার। এই ভোটারদের কাছে টানতে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে নতুনত্ব ঘোষণা করা হবে। সে কারণে কী কী চমক দিয়ে ইশতেহার তৈরি করা হবে- সেগুলো আলোচনা করা হবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে। ইশতেহার তৈরির সঙ্গে যারা অতীতে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের সংযুক্ত করে ইশতেহার তৈরির কমিটি গঠন করা হবে। এ প্রসঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ চলছে।
সেখানে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রথমত, গত নির্বাচনের আগে আমাদের যেসব অঙ্গীকার ছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি তা তুলে ধরা হবে। দ্বিতীয়ত, আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভ করলে আমাদের পাঁচ বছরের পরিকল্পনা ভোটারদের কাছে পেশ করা হবে। সর্বশেষে ইশতেহারে তুলে ধরা হবে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের কী ধরনের স্বপ্ন রয়েছে, পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত করার টার্গেট নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। ওই ইশতেহারে থাকবে মধ্যম আয়ের নির্দেশনা। এর সঙ্গে যোগ হবে ব্লু ইকোনমি (সমুদ্র অর্থনীতি) ও শিক্ষিত যুব সমাজকে দেশ উন্নয়নে কাজে লাগানোর কৌশল। মূলত দলের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে অনুমোদিত ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রই হবে ইশতেহারের মূল ভিত্তি। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের প্রথম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিদের ভোটের ব্যবধান নিয়ে আলোচনা করা হবে।
একই সঙ্গে বিভাগওয়ারি কোন দলের কত ভোট সেসব বিষয় নিয়ে একটি সার সংক্ষেপ আলোচনা হতে পারে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হতে পারে। সারা দেশে ৩০০ আসনে বর্তমান এমপিদের কার কী অবস্থা সেগুলো নিয়েও আলোচনা করা হতে পারে।
-আরবি