নাসির উদ্দীন ইউসূফ শোনালেন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা নাটকের পথচলা

নাসির উদ্দীন ইউসূফ শোনালেন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা নাটকের পথচলা
নাসির উদ্দীন ইউসূফ শোনালেন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা নাটকের পথচলা

শিল্প ও সাহিত্যঃ
বাংলাদেশে নাটক ও মঞ্চ যাদের অনবদ্য সৃজনশীলতা ও দিকনির্দেশনায় পৌঁছেছে অনন্য উচ্চতায়, তার মধ্যে অন্যতম এক স্তম্ভ নাসির উদ্দীন ইউসূফ।

নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মাধ্যমে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ নামক বিস্ময়কর গল্পের যাঁরা রূপকার, দেশের এমন অগ্রজদের নিয়ে আইপিডিসি ফাইন্যান্স-এর অনলাইন আয়োজন ‘অগ্রজ’।

আয়োজনটির সপ্তদশ পর্বে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বাংলা নাটককে প্রতিষ্ঠিত করে তোলার অসামান্য অভিজ্ঞতা জানালেন মুক্তিযোদ্ধা, বাংলা নাটকের শেকড় সন্ধানী নাট্য নির্দেশক ও চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দীন ইউসূফ।

খ্যাতিমান ব্যাংকার আনিস এ খানের সুচারু উপস্থাপনায় অগ্রজ-এর এই পর্বে নাসির উদ্দীন ইউসূফ জানিয়েছেন বাংলা নাটকের পথচলার ইতিবৃত্ত।

ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা নাটক পেয়েছিল যে নতুন পথ, সে পথ ধরে আজ নাটকের মঞ্চ খুঁজে পেয়েছে নতুন এক দিগন্ত।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা উত্তর মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসূফ। তিনি ক্র্যাক প্লাটুনে গেরিলা হিসেবে যুদ্ধ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে তিনি নাট্যকার সেলিম আল দীনকে নিয়ে ‘নাট্যক্রম’ মঞ্চদলের সাথে নাটক নির্মাণ শুরু করেন।

পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে তাঁরা দুজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন মঞ্চদল ঢাকা থিয়েটার, যে মঞ্চ থেকে পরবর্তীতে আমরা অসংখ্য গুণী নাট্যকার, নির্মাতা, অভিনেতা ও বড় শিল্পীদের পেয়েছি।

প্রথমদিকে পাশ্চাত্য ধারার নাটক পরিচালনা করলেও পরে সেলিম আল দীন রচিত অনেক নাটকের নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন।

এগুলোর মধ্যে কীত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, হাতহদাই, যৈবতীকন্যার মন, বনপাংশুল, প্রাচ্য, নিমজ্জন ও ধাবমান উল্লেখযোগ্য।

ঢাকা থিয়েটারের তত্ত্বাবধানেই ১৯৮৩ সালে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর গ্রামে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। তালুকনগর গ্রামের শাহ আজহার ওরফে আজাহার বয়াতীর মাঘীমেলাকে কেন্দ্র করে এর কার্যক্রম শুরু হয়। যাত্রার ভঙ্গিতে নাটকের মঞ্চে বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি ও বর্ণনাত্মক অভিনয় রীতি উদ্ভাবন করে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির সংরক্ষণ ও চর্চা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৯৩ সালে নাসির উদ্দীন ইউসূফ নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘একাত্তরের যীশু’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎসবে সম্মাননা পেয়েছিল।

২০১১ সালে নাসির উদ্দীন ইউসূফ ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। চলচ্চিত্রটি ২০১১ সালে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে ও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মোট ১২টি চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে এশিয়ার সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘গেরিলা’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সে বছর ৬টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতে গেরিলা।

বিশ্বখ্যাত গ্লোব থিয়েটারে ২০১২ সালে তাঁরই নির্দেশনায় প্রথম বাংলাভাষার নাটক হিসেবে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের দ্য টেম্পেস্ট নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে নাসির উদ্দীন ইউসূফ একুশে পদক লাভ করেন। বাংলাদেশের নাটকে তাঁর অগ্রগামী ভূমিকার জন্য তাকে ‘মঞ্চের কান্ডারি’ বলে ডাকা হয়।

আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্রজ-এ আমরা এমন সব ব্যক্তিত্বের জীবনেই আলোকপাত করতে চাই, যাঁরা নিজেদের কার্যক্ষেত্রে অমূল্য অবদান রেখে দেশের জন্য ভবিষ্যৎ সাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে দিয়েছেন।

নাসির উদ্দীন ইউসূফের মতো অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্বরা আমাদের আয়োজনে নিজের কর্মময় জীবনের অভিজ্ঞতার গল্প জানিয়েছেন, সেজন্য আমরা ভাগ্যবান। তাঁর উপস্থিতি আমাদের এই উদ্যোগকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে।’

দেশকে স্বাধীনতার পর থেকে গড়ে তুলতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখা মহান ব্যক্তিত্বদের কর্মময় জীবনের চড়াই-উৎরাই ও তাঁদের জানা-অজানা অমূল্য অভিজ্ঞতা সেইসব ব্যক্তিত্বদের কাছে সরাসরি জেনে নিতে এক ভিন্নধর্মী অনলাইন আয়োজন ‘অগ্রজ’।

আইপিডিসি-র এই বহুল প্রশংসিত অনলাইন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন দেশের ব্যাংকিং জগতের অন্যতম পথিকৃৎ জনাব আনিস এ খান।

-শিশির

FacebookTwitter