লাইফস্টাইলঃ
নারীর উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বে থাকা অনেক পুরুষই মেনে নিতে পারেন না। নারীর মতামত নেওয়াকেও অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
নারী আসলেই কাজ পারবে কি না—এমন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিভঙ্গি অনেকের মধ্যে দেখা যায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পেশাজীবী তরুণীদের নিয়ে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা উঠে এসেছে।
ওয়েবিনারে শনিবার বক্তারা বলেন, দেশের বেশির ভাগ নারী এখনো বৈষম্যের শিকার। একটি বৈষম্যের সঙ্গে অন্য একটি বৈষম্যের জোরালো সম্পর্ক থাকে। গতানুগতিক পেশার বাইরে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় একটা মেয়ে চিরাচরিত নানা বাধার সম্মুখীন হয়।
দৈনন্দিন জীবনযাপনেও অনেক রকমের বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়, যাকে বৈষম্যকারীরা ‘সহজাত’ বলে মনে করে।
ওয়েবিনারের শুরুতে সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম জানান, জন্মসূত্রে সব মানুষ স্বাধীন এবং সমমর্যাদা লাভের অধিকারী—সর্বজনীন মানবাধিকারের এই দর্শনকে ধারণ করে ১৯৭০ সালের ৪ এপ্রিল কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে সংগ্রামী তরুণীদের উদ্যোগে গঠিত হয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নারীমুক্তি, নারীসমাজকে অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের জন্য আন্দোলন করেছে। সাংগঠনিক কাজে সব সময় তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেয় এই সংগঠন
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতক পরে এসে দেশের উন্নয়নের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হলেও এর সঙ্গে তাঁর অধিকার ও মর্যাদার দিকটি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।
নারীর প্রতি সমাজের অধস্তন ও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ এখনো একটি মৌলিক সমস্যা হিসেবেই আছে। নারীর অংশগ্রহণের সঙ্গে অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে প্রকৃত উন্নয়ন হবে না।
এ সময় তিনি বৈষম্যকে দূর করতে প্রত্যেককে নিজ নিজ ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করার আহ্বান জানান।
সভার মূল আলোচক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও আবৃত্তিশিল্পী শারমিন লাকি বলেন, ‘যত দিন না নারীরা মর্যাদা পাবে, নারীদের আমরা মানুষ হিসেবে ভাবতে না শিখব, তত দিন বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়।
এ জন্য নারীকেও সচেতনভাবে এগোতে হবে, পরিবার থেকেই এই বৈষম্য দূরের কাজ শুরু করতে হবে।’
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, কাজের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বৈষম্যের বিষয়ে একেক গোষ্ঠীর নারীদের একেক রকম চিন্তাধারা এখনো আছে। এর পরিবর্তন ঘটাতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজকে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য দূর করে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা দিতে হবে এবং তরুণদের সব সংগ্রামে যুক্ত হয়ে নিজ নিজ পরিকল্পনার সমন্বয় করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী সৃষ্টি সেঁজুতি হালদার। সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন আফিয়া আখতার, লাবিবা ইবনাত সুপ্রভা ও সারাফ ওয়ামিয়া সুপ্রীতি।
কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী শুক্লা দাসগুপ্ত ও অন্বেষণা বণিক। ওয়েবিনারে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, সম্পত্তিতে সম-অধিকার, যৌন হয়রানি প্রতিরোধের ওপর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের টিভিসি প্রদর্শন করা হয়।
-টিপু