ধর্মকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করবেন না

ধর্মকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করবেন না
ধর্মকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করবেন না

জাতীয়ঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ধর্মকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে সমাজে নৈরাজ্য ও বিভাজন সৃষ্টির জন্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে বলেছেন, সরকার আর এই অন্যায় কাজগুলি সহ্য করবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশে ধর্মের নামে আমরা কোন ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দিব না,’ তিনি আজ সন্ধ্যায় বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে কিছু ইসলামপন্থী দলের জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রতিক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, প্রত্যেককে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন,’ যোগ করেন তিনি।

ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এ দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭১’র পরাজিত শক্তি একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে (জাতির পিতার ভাস্কর্য তৈরীর বিষয়ে) সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানিং মাঠে নেমেছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

‘জাতির পিতা ১৯৭২ সালে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে বলেছিলেন,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রুকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

‘যারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে,’ প্রধানমন্ত্রী সেই সমস্ত লোককে স্মরণ করিয়ে দেন যে, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান-সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এ বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরান, শাহ মকদুম, খানজাহান আলীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ, সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির বাংলাদেশ। এ দেশ সকলের।’

প্রধানমন্ত্রী সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তাই আসুন, আবারও আমরা শপথ নেই-আমরা যেন লাখো শহিদের রক্তের ঋণ ভুলে না যাই। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ভূলুণ্ঠিত হতে না দেই।’

‘যুবশক্তি, তরুণ সমাজ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ, তোমরা তোমাদের পূর্বসূরীদের আত্মোৎসর্গের কথা কখনই ভুলে যেও না। তাঁদের উপহার দেওয়া লাল-সবুজ পতাকার অসম্মান হতে দিও না,’ উল্লেখ করে তিনি তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ‘যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের বিজয়-নিশান সমুন্নত রাখার শপথ নাও এই বিজয় দিবসে। প্রতিজ্ঞা কর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশকে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করবে। তবেই ৩০ লাখ শহিদের আত্মা শান্তি পাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্রোহী কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে চাই: ‘চাহি না জানিতে-বাঁচিবে অথবা/ মরিবে তুমি এ পথে,/এ পতাকা বয়ে চলিতে হইবে/বিপুল ভবিষ্যতে।/’

শেখ হাসিনা দেশবাসীকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর আমাদের বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে আমাদের দৈনন্দিন কার্যপ্রণালীতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, জনসমাগম এড়িয়ে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করতে হচ্ছে।

প্রতিটি মানুষের জীবনই মহা মূল্যবান। কোন অবহেলায় একজন মানুষেরও মৃত্যু কাম্য নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় দিবস উদ্যাপনসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করবেন এবং মাঝে মধ্যে হাত সাবান অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিস্কার করবেন। আপনার সুরক্ষা, সকলের জন্য রক্ষাকবচ।’

-বাসস

FacebookTwitter