স্বাস্থ্যঃ
নবজাতক মৃত বলে ৪ ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় কার্টুনে মুড়িয়ে ফেলে রাখা হয়। দাফনের প্রস্তুতি নিতে কার্টুন খুলে দেখা যায় শিশুটি নড়াচড়া করছে। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে এনে ভর্তি করা হয় নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালের এনআইসিইউতে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে।
এ ঘটনার জন্য নবজাতকের বাবা ও স্বজনরা কুমেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও আয়ার অবহেলাকে দায়ী করছেন। ওই প্রসূতি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার চড়ানল গ্রামের জামাল হোসেনের স্ত্রী শিউলী আক্তার।
জানা গেছে, শিউলী আক্তারের প্রসব বেদনা দেখা দিলে তাকে গত বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনে তার একটি ছেলে সন্তান হয়।
নবজাতক শিশুর বাবা জামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জন্মের পর একজন আয়া আমাদের কাছ থেকে প্রথমে একটি কাঁথা নিয়ে শিশুটিকে মুড়িয়ে হাসপাতালের মেঝেতে ফেলে রাখেন। কিছুক্ষণ পর শিশুটিকে একটি কার্টনের ভেতরে রেখে আরও প্রায় ৪ ঘণ্টা বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। এরপর মৃত বলে শিশুটিকে দাফনের জন্য আমাদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে শিশুকে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কার্টন খুলে দেখা যায় ওই শিশুটি জীবিত, নড়াচড়া করছে। এ অবস্থায় একটি সিএনজিযোগে দ্রুত শিশুকে কুমিল্লা শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে (মুন হসপিটাল) এনে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, জন্মের পর শিশুটির দিকে কোন ডাক্তার বা নার্স নজর দেননি, তারা শিশুর মাকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। এ ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও আয়া দায়ী। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিশুর স্বজন সাইফুল ইসলাম বলেন, শিশু সুস্থ থাকলে মায়ের (প্রসূতি) কাছেই থাকতো, বাড়িতে নিয়ে আসতাম না। দাফনের জন্য কার্টুন খুলে দেখি শিশুর পা নড়ছে। তাই দাফন না করে এখানে (মুন হসপিটাল) এনে এনআইসিইউতে ভর্তি করেছি।
তিনি আরো বলেন, সরকারি হাসপাতালে বড় বড় ডাক্তাররা আছেন। সেখানে প্রত্যাশিত সেবা না পেলে আমরা কোথায় যাব। তাদের ভুলের কারণে শিশুটির জীবন বিপন্ন। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি দাবি করছি। বর্তমানে নবজাতক শিশুটি মুন হাসপাতালের এনআইসিইউতে এবং তার মা (প্রসূতি) কুমেক হাসপাতালের ৩য় তলায় পোস্ট অপারেটিভ কক্ষের ৫নং বেডে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন।
মুন হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. তাপস চৌধুরী জানান, ‘চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা ছাড়া একজন আয়া কিভাবে এ কাজ করে সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। ২৮ সপ্তাহের আগে প্রি-ম্যাচিউর এ শিশুটি অলৌকিকভাবে বেঁচে আছে। শিশুটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।’
-কেএম