নীলফামারী থেকে মহিনুল সুজনঃ
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নীলফামারীর ডোমারের সদর ইউনিয়ন পরিষদে অতি দরিদ্রদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ৫০ কেজি ওজনের ৩৭ বস্তা প্যাকিং বিজিএফ চাল কালোবাজারে পাচারের সময় এলাকাবাসী আটক করার একদিন অতিবাহিত হবার পরও শুক্রবার(৩১মে) পর্যন্ত রহস্যজনক কারনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এমনকি জড়িতরা সহ একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামা-চাপা দিতে জোর অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় এলাকার সাধারন মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়,গত বৃহস্পতিবার(৩০মে) বেলা প্রায় তিনটার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের দুইশো গজ পেছন থেকে বিজিএফ চালের বস্তাভর্তি দুটি ভ্যান ও আরডিআরএস মোড় এলাকায় বস্তাভর্তি একটি ভ্যান সহ মোট ৩৭ বস্তা প্যাকিং বিজিএফ চাল এলাকাবাসী আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জিম্মায় দেন।তারপর থেকেই ঘটনার মুলহোতা উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাব্বের হোসেন(মানু)প্রকৃত ঘটনাটি আড়াল করে তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে নিজেকে বাচাতে প্রভাবশালী একটি মহলের সহযোগীতায় দেন দরবার চালিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামা চাপার অপচেষ্টায় মেতে উঠেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন(গত বৃহস্পতিবার) সকাল হতে চাল বিতরন করা হচ্ছিল ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে।ডোমার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাব্বের হোসেন (মানু) প্রকৃত অতি দরিদ্রদের সব চালের কার্ড(ছিলিপ) না দিয়ে গোপনে কার্ড নিজের কাছে রেখে দেন।তাই প্রথমদিনে বিতরণের পর ওইসব ছিলিপ ব্যবহার করে আত্মসাতকৃত বাড়তি চাল গুলো কালোবাজারে ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেন তিনি।এবং ওই দিন বিতরণের পর পরিষদে যে পরিমান চাল থাকা প্রয়োজন তারও বেশি চাল মজুদ থাকলে তিনি যে কোনো মুহুর্তে ফেসে যাওয়ার ভয়ে বাড়তি চাল গুলো যাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন সেইসব চাল ব্যবসায়ীদের দ্রুত পরিষদ হতে অন্যত্রে সরিয়ে নিতে বলেন।তার কথা মতই সেদিন দিন-দুপুরে চাল ব্যবসায়ীরা ডোমার ইউনিয়ন পরিষদ হতে চাল গুলো বিভিন্ন এলাকায় সরিয়ে নেয়ার সময় এলাকাবাসী তিনটি ভ্যানে প্যাকিং ৩৭ বস্তা বিজিএফ চাল আটক করতে পারলেও সে সময়ে একই ভাবে আরো চালের বস্তাভর্তি কয়েকটি ভ্যান কালোবাজারে পাচার হয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চাল গুলো আটকের পর ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বের হোসেন(মানু)সহ একটি মহল কার্ডধারী সুবিধাভোগীরা প্রাপ্ত চাল গুলো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে প্রচার চালালেও প্রতিটি চালের বস্তাই প্যাকিং অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় জনমনে দেখা দেয় নানান প্রশ্ন!
তাই তারা বলছেন,সুবিধাভোগীদের বিক্রি করে দেয়া চাল হলে কোনো অবস্থাতেই তা প্যাকিং অবস্থায় থাকতোনা।কারন নিয়মে রয়েছে প্রতিজন কার্ডধারী সুবিধাভোগী ১৫ কেজি করে এই চাল পাবেন। সে নিয়ম মোতাবেক কতজনকে মিলে চেয়ারম্যান সাহেব একটি ৫০ কেজি প্যাকিং চালের বস্তা দিয়েছেন? তিনজনকে একত্রিত করে একটি চালের বস্তা দিতে গেলেও বস্তা প্যাকিং থাকার কথা নয়, অন্যদিকে চারজনকে একত্রিত করে চাল দিতে গেলেও আরো খোলা চালের প্রয়োজন?
কিন্তু আটকৃত ৩৭ বস্তা চালের মধ্যে কোনো রকম খোলা চালই ছিলোনা।তাছাড়া প্যাকিং অবস্থায় চাল বিতরণের কোনো নিয়ম নেই বলেও বলছেন সংশ্লিষ্ট্য কর্তাগণ?
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ডোমার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বের হোসেন মানু’র ব্যবহৃত(০১৭২২৪৯০৭৪৮) মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা রিসিভ না করে এক পর্যায়ে ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।
ডোমার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাইমিনুল ইসলাম জানান,এ ভাবে সরকারের বরাদ্দের ভিজিএফের প্যাকিং বস্তার চাল ক্রয় বিক্রয় আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ।
ভ্যান যোগে চাল পাচারের সময় এলাকাবাসীর হাতে তা আটক হবার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভ্যান চালকদের ভাষ্যমতে জানতে পারি যে, চাল গুলোর মালিক চাল ব্যবসায়ী মশিয়ার, সফিয়ার ও আনোয়ার।
তবে কার কাছে ওইসব ব্যবসায়ীরা এসব চাল ক্রয় করেছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, বিজিএফ চালের বস্তা গুলো জব্দ করা হয়েছে।আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এদিকে জড়িতরা প্রকৃত ঘটনাটি যাতে করে কোনো ভাবেই ধামা-চাপা দিতে না পারেন সে বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধŸতন কর্তপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
-এসএম