তারেকের সাজা স্টেট স্পনসর্ড জাজমেন্টঃ রিজভী

অনলাইন ডেস্কঃ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গতকাল যে সাজা দেয়া হয়েছে তা স্টেট স্পনসর্ড জাজমেন্ট।

 রিজভী বলেন,  বিএনপি-কে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার জন্যই সরকারের বিশেষ ব্যক্তির মনোবাঞ্ছা পূরণে এই রায়। এই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এজন্য যে, একতরফা নির্বাচন করার জন্য এই রায় একটি কারাসাজি। ২১শে আগষ্ট বোমা হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফাঁসানোর জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে কি নির্মমভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে আপনাদেরকে ইতোপূর্বে অবহিত করেছি।

তিনি বলেন, হাত-পায়ের নখ তুলে নিয়ে অকথ্য শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে সম্পূরক জবানবন্দী নেয়া হয়েছিল। মুফতি হান্নান দাবী করে বলেন, ব্যাপক নির্যাতন করে সিআইডির লিখিত কাগজে তার সই আদায় করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৮-০৯-২০১১ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায়-“সম্পূরক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন মুফতি হান্নানের” শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে-২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপি-জামায়াত নেতাদের জড়িয়ে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন মুফতি হান্নান….গতকাল (২৭-০৯-২০১১) মঙ্গলবার আইনজীবীর মাধ্যমে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুরউদ্দিন এর কাছে এই আবেদন করেন হরকাতুল জেহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান।

তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে এধরণের কোন জবানবন্দী দেননি …..রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ ও আকরাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মুফতি হান্নানের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন তার আইনজীবী লুৎফর রহমান আদালতে দাখিল করেন। প্রথমে আবেদনে মুফতি হান্নানের সই ছিল না, তারা বলেন-আইন ও পদ্ধতিগতভাবে এই আবেদন করা হয়নি। এধরণের আবেদনে যিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন তাকেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করতে হবে।

অবশ্য রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তির পর মুফতি হান্নানের সই নিয়ে তার আইনজীবী আবার আদালতে আবেদনটি জমা দেন। তবে এ নিয়ে আদালত কোন আদেশ দেননি। হাতে লেখা ১০ পৃষ্ঠার প্রত্যাহার আবেদনে বলা হয়, গ্রেফতারের পর এ পর্যন্ত মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মুফতি হান্নান সেদিন আরও বলেছিলেন-২১শে আগষ্ট বোমা হামলায় জনাব তারেক রহমান বা বিএনপির কেউ জড়িত নয়।

সুতরাং বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই কারো ইচ্ছা পূরনে গতকাল এই রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু জনগণ এই রায় প্রত্যাখান করেছে। এই রায়ের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিভাবে সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিসহ সাধারণ জনগণও।

রিজভী বলেন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বন্দুকের জোরে তাড়িয়ে দেয়া এবং সঠিক বিচার করতে গিয়ে জেলা জজ মোতাহার হোসেনকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। সুতরাং গতকাল নিম্ন আদালত যদি সঠিক রায় দিতো তাহলে তাকেও দূর্ভাগ্য বরণ করতে হতো। লক্ষীপুরে এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে প্রকাশ্যে খুন করে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তথ্যমতে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে বিশেষ ক্ষমতায় অন্যান্যদের মধ্যে প্রায় ৬ হাজারের মতো ভয়ঙ্কর আসামীদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বিচার প্রক্রিয়া দুষ্টকে পালন করারই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সুতরাং যতদিন এই ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন কেউ ন্যায়বিচার পাবে না বলেই জনগণ মনে করে।

সাংবাদিকদের তিনি আরও জানান,

গত ০৯ অক্টোবর ২০১৮ রাতে কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, আবদুল্লাহপুর, শুভাড্যাতে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বিএনপি নেতাকর্মীদের দোকানপাট, বাড়ী ঘরে ব্যাপক হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণে) এখন ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, মতিঝিল থানা বিএনপি নেতা হাসিবুর রহমান মান্নুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পল্টন থানাধীন ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মাখি আলম এবং মোঃ মনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সরকারী কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদল নেতা খন্দকার ইরফান আহমেদ ফাহিমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

নেত্রকোণা জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়ারেশ উদ্দিন কারাস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ মুন্নাসহ ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মাদারীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন এবং সৈয়দপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবু সরকার, মোঃ বাবলু, মোঃ জাবেদ এবং মোঃ শাকিলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বরিশাল মহানগর যুবদল সভাপতি এ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামীম, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদ হাসান মামুন, যুবদল নেতা তারেক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ যুবদল সহ-সভাপতি সিরাজ ও মহিউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানা যুবদলের সভাপতি আমির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণঃ
মতিঝিল থানা বিএনপির নেতা হাসিবুর রহমান মানু, বংশাল থানা বিএনপি নেতা খালেদ হাসান টুটুল, মুগদা থানা বিএনপি নেতা মোঃ শাহজাহান, গেন্ডারিয়া থানার ৪৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি সহ-সভাপতি হাজী মোঃ ফারুক, খিলগাও থানা বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন দুলাল, নিজামউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম বাবুল, আরিফ,লিয়াকত, কাওছার, তোহিদ, ডেমরা থানা বিএনপি নেতা মোঃ মিন্টু, সাইদুর রহমান টিটু, মাসুদ রানা, আল আমিন, মোঃ রমজান, মোঃ ফিরোজ মিয়া, মোঃ শহিদুল রিপন খান, মোঃ খালেক, শ্যামপুর থানা বিএনপি নেতা মাসুদ পারভেজকে গতকাল পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

ঢাকাঃ
কিশোরগঞ্জ জেলাধীন করিমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের প্রচার স¤ক্সাদক মোঃ ওমর ফারুক সেলিমকে গতকাল ঢাকার পল্টন মোড় থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।

গাইবান্ধা জেলাঃ
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা যুবদলের ১ম যুগ্ম স¤ক্সাদক মোঃ মশিউর রহমানকে গায়েবী মামলায় পুলিশ গতকাল গ্রেফতার করেছে।

ভোলা জেলাঃ
দক্ষিণ আইশা থানার ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, দুলারহাট থানার সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল ইসলামকে গতকাল পুলিশ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে এবং ভোলা জেলায় মোট ৪টি মিথ্যা মামলা রুজু করেছে।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ০৯ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ফরিদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলের ওপর পুলিশ গাড়ী উঠিয়ে দিয়ে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। এছাড়া নেত্রকোণা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ মুন্নাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সৌদি আরব পূর্বাঞ্চল বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক আ ক ম রফিকুল ইসলামকে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নিজ বাড়ীতে থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

নওগাঁ জেলাধীন ধামইরহাট উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সালেহ আহমেদ কাঞ্চনকে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দল লালমনিরহাট জেলাধীন সদর উপজেলা শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম প্রধান, হাতিবান্ধা উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার মোঃ নুর নবী কাজল এবং সাতক্ষীরা জেলাধীন সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন নীরবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি আবু ইয়াহিয়া ইউনুস আহমেদের বাসায় তল্লাশীর নামে ব্যাপক ভাংচুর ও তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ।

শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের চট্টগ্রামের বাসায় পুলিশ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তল্লাশীর নামে ব্যাপক তান্ডব চালায় এবং বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে।

আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দায়ের, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন এবং বাসায় বাসায় তল্লাশীর নামে পুলিশী তান্ডবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবী করছি। বাসায় বাসায় পুলিশী তান্ডব বন্ধেরও তিনি জোর দাবী জানানে।

এসএম

FacebookTwitter