প্রশাসনঃ
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক পুলিশ কর্মকতার বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে নগরীর একটি বাড়িতে ডেকে এনে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই পুলিশ গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এএসআই।
২৫ অক্টোবর রবিবার মহানগরীর হারাগাছ থানার ক্যাদারের পুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ অসুস্থ ঐ কিশোরীকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এএসআই রায়হানুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে।
এছাড়াও এ ঘটনায় সম্পৃক্ত আরো দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দায়ের করা ধর্ষণ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই।
পিবিআই ও কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঐ ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির এএসআই রায়হানুল ইসলাম। সে এর আগে হারাগাছ থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিল। সম্পর্কের সূত্র ধরে রবিবার সকালে ঐ ছাত্রীকে রায়হান ডেকে নেয় ক্যাদারের পুল এলাকায় শহিদুল্লাহ মিয়ার ভাড়াটিয়া সুমাইয়া পারভীন ওরফে মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে। সেখানে প্রথমে রায়হান ঐ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। পরে তার আরো কয়েকজন পরিচিত যুবককে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঐ ছাত্রীকে ধর্ষণ করায়। এ ঘটনায় ঐ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঐ বাসা থেকে বের হয়ে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে সে পুলিশকে বিষয়টি জানায়।
রাতে পুলিশ ঐ ছাত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে সুমাইয়া পারভীন মেঘলা ও সম্পা বেগমকে ধরে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। খবর দেওয়া হয় ছাত্রীর পরিবারকে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত এএসআই রায়হানুলকে বাঁচাতে টাকার দেনদরবার চলে থানা এলাকায়। বিষয়টি অবহিত হয়ে পুলিশ কমিশনার সেখানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা পাঠান। তার হস্তক্ষেপেই ছাত্রীর পিতা আয়নাল বাদী হয়ে পুলিশ সদস্য রায়হান, মেঘলাসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন।
মধ্য রাতে পুলিশ অসুস্থ ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে। গতকাল সোমবার সকালে তাকে হাসপাতালের ওসিসিতে নেওয়া হয়। সেখানে তার ডাক্তারি পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
ছাত্রীর মা জানান, ‘মামলার আসামি ধরতে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে পরিচয় হয় এএসআই রায়হানুলের। তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু সে যে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে এভাবে নির্যাতন করবে, সেটা মেনে নিতে পারছি না। আমার মেয়ে পড়াশোনায় খুব ভালো। তার জীবন ধ্বংসকারী রায়হানুল ও জড়িত অন্যদের গ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ড চাই।’
সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, মামলায় এএসআই রায়হানুলকে ২ নম্বর আসামি করায় প্রমাণিত হয় থানার পুলিশ প্রথমে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মামলা হারাগাছ থানা থেকে পিবিআইকে দিয়েছি। এএসআই রায়হানুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে আটক করে পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করে রাখা হয়েছে। পিবিআই চাওয়ামাত্রই আমরা রায়হানুলকে তাদের কাছে হস্তান্তর করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘অপরাধী অপরাধীই। তার কোনো পরিচয় নেই। ঘটনাটি জানামাত্রই আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করে ছাত্রী ও তার পরিবারের জবানবন্দি নিয়ে মামলা নিয়েছি।’
পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার দুপুরের পর আমরা মামলার তদন্তভার পাই। আমরা হাসাপাতালের ওসিসিতে গিয়ে ছাত্রীর জবানবন্দি রেকর্ড করি। এছাড়া পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া ঘটনার তথ্য ও নথিপত্র নিয়ে আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘হারাগাছ থানা মামলার এক নম্বর আসামি সুমাইয়া পারভীন মেঘলা (২২) ও অপর সহযোগী সম্পাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। পুলিশ লাইনসে ক্লোজ্ড অবস্থায় আছেন এএসআই রায়হানুল। আমরা যথাসময়ে তাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা রায়হানের ডিএনএ পরীক্ষা করে তা ম্যাচ করাব। এ ঘটনায় কোনো অভিযুক্তই ছাড় পাবে না।’
তদন্ত সূত্রগুলো বলছে, ডিবিতে আসার আগে এএসআই রায়হানুল হারাগাছ থানায় কর্মরত ছিলেন। তদন্তে এএসআই রায়হানুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বিভিন্ন সময়ে মেয়ে নিয়ে গিয়ে দেহ ব্যবসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি হারাগাছ থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্য থাকার অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
-বিএস