করোনা সংবাদঃ
বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালানো নভেল করোনাভাইরাসে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানিও। আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ২হাজার ৫২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে গতকাল ২৯ মে, শুক্রবার জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪২ হাজার ৮৪৪ জন। একই সময়ে আরো ২৩ জনের মৃত্যুসহ দেশে মোট ৫৮২ জনের প্রাণ কেড়েছে কোভিড-১৯ নামের ভাইরাসটি।
সঠিকভাবে সারা দেশে লকডাউন কার্যকর না হাওয়ায় আগামী জুন মাসে দেশে ব্যাপক হারে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ। সেইসাথে এই মাসে প্রচুর মানুষের মৃত্যুর শঙ্কাও প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
গতকাল ২৯ মে, শুক্রবার অনলাইনে আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে এক বিবৃতিতে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ।
বিবৃতিতে বলা হয়, সঠিকভাবে লকডাউন কার্যকর না হওয়ায় সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। জুন মাস আমাদের জন্য একটি কঠিন সময়।
এ মাসে করোনাভাইরাসে ব্যাপক প্রাণহানি হতে পারে- বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও তা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটাতে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এ দুর্যোগ মোকাবিলার প্রথম পর্যায়ে প্রধান ভূমিকা যে খাতের, সেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ অতি নগণ্য।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রথমদিকে সরকারি পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে দিয়ে পরে কিছু বেসরকারি হাসপাতালকে এ পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা গরিব মানুষের সাধ্যের বাইরে। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা ও সমন্বয় না থাকায় চিকিৎসায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। করোনা চিকিৎসার সঠিক দিকনির্দেশনা (গাইডলাইন) চিকিৎসকদের কাছে এখনো পৌঁছানো হয়নি।
আলোচনা সভা থেকে সংগঠনটি যে সাতটি দাবি উপস্থাপন করে সেগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
১. অবিলম্বে কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে, এর চিকিৎসার সব দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে রিকুইজিশন করে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আরো চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মী দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।
২. একযোগে সারাদেশে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণযুক্ত রোগী খুঁজে পরীক্ষার জন্য অবিলম্বে মানসম্মত র্যাপিড টেস্ট কিট (সায়েন্স ল্যাবরেটরি/গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত অথবা এন্টিজেন/এন্টিবডি নির্ণয় টেস্ট কিট) অবমুক্ত করতে হবে।
৩. বর্তমানে চলমান লকডাউন দৃঢ়ভাবে আরো কিছুদিন (সংক্রমণ কমা শুরু না হওয়া পর্যন্ত) চালু রাখতে হবে। লকডাউন তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিতে হবে। লকডাউন চালু রাখার সময় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও চিকিৎসা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী (কমিউনিটি ক্লিনিকসহ) এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের যুক্ত করে ‘করোনা স্ক্রিনিং টিম’ গঠন করে পাড়া-মহল্লায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে করোনা রোগের লক্ষণযুক্ত রোগী খুঁজে বের করা, পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করার কাজে লাগাতে হবে।
৫. প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত রোগীদের দ্রুত আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় স্টেডিয়াম, মিলনায়তন, কমিউনিটি সেন্টার, বন্ধথাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসা বা সন্দেহভাজন রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিন/ আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. করোনা রোগী চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণকর্মীদের নিজ গৃহে ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিনে থাকা ও খাবারের সুব্যবস্থা করা এবং কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতে পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা এবং প্রতিটি হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে তাদের জন্য মানসম্পন্ন পিপিই নিশ্চিত করতে হবে।
৭. সরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরকার ঘোষিত ঝুঁকি বিমা ও ভাতার ক্ষেত্রে বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার সব দায়ভার রাষ্ট্র বহন করবে ও এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যখাতের কারো মৃত্যু হলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
-ডিকে