জনগণকে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়ঃ

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত বিশেষ এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ উপস্থিত রয়েছেন।

আয়োজনের প্রথম দিন ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করান।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুসহ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন। বিজয় দিবসে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।

আমি আরও স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত আমার পিতা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, আমার ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও তার নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল, আরেক ভাই মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও তার নবপরিণীতা বধূ পারভীন জামাল, আমার ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন এবং পুলিশ অফিসার এএসপি হাসিবুর রহমানকে।

স্মরণ করছি যুবনেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষকনেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার দশ বছরের ছেলে আরিফ, ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, চার বছরের নাতি সুকান্ত, ভ্রাতুষ্পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে রেন্টুসহ যে ১৮ জন সদস্য সেদিন শাহাদাতবরণ করেছেন। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকদের হাতে নিহত চার জাতীয় নেতা – সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানাকে।

গণতন্ত্র, ভোটের ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা শহিদ হয়েছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের স্মরণ করছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করবে এটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেনি। তাই বাঙালিদের ও পর শুরু করে নিপীড়ন-নির্যাতন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহবান জানান; যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতি জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার ভাষণে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বাংলাদেশের জনগণ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমি কোট করছি- ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’ শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তার এই স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পাঠানো হয়। পূর্ব থেকেই ইপিআর-এর সুবেদার মেজর শওকত আলী তার তিনজন সহকর্মীসহ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। এই বার্তা বাংলাদেশের সব পুলিশ স্টেশন অর্থাৎ থানায় প্রেরণ করা হয়।

থানায় কর্মরত অফিসাররা এই বার্তা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাতে ভোররাতে পৌঁছে দেন। একইসঙ্গে টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারেও এ বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে, মুখে চোঙ্গা ফুঁকিয়ে বা রিকশায় করে মাইক দিয়ে জেলা থেকে থানা পর্যন্ত এই বার্তা প্রচার করেন। প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করেন। ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জনাব আবদুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে অন্য নেতারা এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকায়ও প্রচারিত হয়। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ মোতাবেক যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত, রাশিয়াসহ অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম দেশ ও সেসব দেশের জনগণ। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করি। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়। প্রিয় দেশবাসী, আসুন আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, বিশ্বসভায় উন্নত সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এখন শপথ গ্রহণ করব।

প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমি এখন শপথবাক্য পাঠ করাব। আপনাদের আমার সঙ্গে কণ্ঠ মেলানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিজয় দিবসে দীপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’

সকল মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

-বাসস

FacebookTwitter