ডেস্ক রিপোটঃ
বাংলাদেশের চা বাগানমালিকগণের সংগঠন ‘বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিসিএস)’-‘বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন (বিটিএ)’ এই মর্মে সকলের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছে যে, গত ২৭-০৮-২০২২ তারিখ বিকাল ৪ ঘটিকায় গণভবনে চা শিল্পের উদ্ভূত অচলাবস্থা নিরসন কল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে চা বাগান মালিকগণের আলোচনার প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরী ১২০/- টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৭০/- টাকা নির্ধারণ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, গত ০৯-০৮-২০২২ তারিখ থেকে ধর্মঘটরত চা শ্রমিকদেরকে ২৮-০৮-২০২২ তারিখ থেকে কাজে যোগদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় নির্দেশ জ্ঞাপন করেছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি চা শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্বির লক্ষেই শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা ইনিস্টিটিউটে স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে চা শিল্পেই সুদূর প্রসারী উন্নয়ানের যাত্রা ও সার্বিক বিকাশের পথ উন্মোচন করেন।
তিনি ১৯৭২ সালে রব কমিশন গঠনপূর্বক চা শিল্পের সমস্যা ও সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ও ১৯৭২-৭৪ সালে চা বাগানের বিধস্ত কারখানা চালু করার লক্ষ্যেই ভারত হতে আইডিবিআই ঋণের ব্যবস্থা করে চা শিল্পকেই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান জনাব এম. শাহ আলম অত্র এসোসিয়েশনের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি ‘স্মারক লিপি’ প্রদান করেন।
বিটিএ পক্ষ থেকে উক্ত সভায় জানানো হয় যে, দেশে চা একটি কল্যাণমূলক শিল্পের আদর্শ হিসাবে দেড় শতাব্দীর অধিক সময় ধরে গড়ে উঠেছে।
এ শিল্পে নিয়োজিত একজন শ্রমিক নগদ মজুরি (ঈধংয) এবং দ্রব্য ও অনগদ পারিশ্রকিম বাবদ (রহ করহফং) মজুরি পেয়ে থাকেন যার পরিমাণ মজুরির নগদ অংশের দ্বিগুনের বেশি ।
স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নারীদের অধিকার ও সম্মান প্রদানে চা শিল্পই প্রথম পদক্ষেপ নেয়। ১৬৮ বছরের পুরোনো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রম আইন অনুসরণপূর্বক ৭০ দশকে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এর মাধ্যমে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সম কাজের জন্য সম মজুরি নিশ্চিত করেছে।
চা শিল্পে ১৯৩৯ সাল থেকে শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রচলন করা হয় এবং মাতৃকালীন ছুটি ও আইন নির্ধারিত মাতৃকালীন ভাতা দিয়ে থাকে।
চা বাগানগুলো গর্ভ ও প্রসবকালীন জটিলতাসহ সব ধরণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করছে যা বাংলাদেশে প্রচলিত অন্য কোন শিল্পে বিরল।
সর্বোপরি সবদিক থেকেই চা শিল্প অনেক আগে থেকে সুসংগঠিত একটি শিল্প।
চা শিল্পে প্রতি শ্রমিককে ২/- টাকা কেজি দরে মাসে গড়ে প্রায় ৪২ কেজি চাল রেশন হিসেবে প্রদান করা হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ২,৩১০ টাকা, অথবা সমপরিমান আটা দেয়া হয়।
তাছাড়া শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে চা শিল্পে প্রায় ৯৪,২০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য চা শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে ।
চা শ্রমিক ও তার পুরো পরিবারের সকলেই বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে থাকেন অথচ অন্যান্য শিল্পে শুধুমাত্র শ্রমিক নিজেই এই সুবিধা পান।
শ্রমিকদের মৃত্যুর পরেও তার পরিবারের জন্য এই সুবিধা বহাল থাকে।
উল্লেখ্য যে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চা শিল্পে ০২ টি বড় আকারের আধুনিক গ্রুপ হাসপাতাল ও ৮৪ টি গার্ডেন হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫ টি ডিসপেনসারি সহ সর্বমোট ৮৯০ জনের অধিক মেডিকেল স্টাফ নিয়োজিত আছেন।
চা শ্রমিক সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ সর্বমোট ৭৬৮ টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ১,২৩২ শিক্ষক কর্মরত আছেন এবং বর্তমানে ৪৪,৮০০ জন এর বেশী শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।
চা শ্রমিকদের বসতবাড়ির জন্য বিনামূল্যে পরিবার প্রতি ন্যূনতম ১,৫৫১ স্কয়ার ফিট স্থানে দুই কক্ষবিশিষ্ট ও রান্নঘর এবং ল্যাট্রিনসহ বসতবাড়ী বাগানমালিক নির্মাণ করে দেয়, এবং সর্বমোট ৫,৮০০ বিঘা জায়গা শ্রমিকদের বসতবাড়ির জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তাছাড়া গবাদি পশু পালনের জন্য চারণভূমি ও রাখালের খরচও বাগানমালিক বহন করে থাকে।
এছাড়াও একজন চা শ্রমিক অবসর গ্রহণ করলে তার পরিবর্তে তার পছন্দ অনুযায়ী পরিবারের একজনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকরা অবসর ভাতা পেয়ে থাকেন এবং ২/- টাকা প্রতি কেজি মূল্যে চাল বা আটাও পেয়ে থাকেন।
এক হিসাবে দেখা যায় যে, দৈনিক ১৭০/- টাকা নগদ মজুরি হলে তার সাথে দ্রব্য ও অনগদ পারিশ্রমিক মিলে মোট মজুরি গড়ে দৈনিক প্রায় ৫৪০/- টাকা হয়।
এখানে উল্লখযোগ্য যে, বর্তমানে চা এর গড় নিলাম মূল্য ২০২ টাকা এবং উৎপাদন ব্যয় প্রায় ২০০ টাকা।
চা চাষের বহু উপাদানের মূল্য বহু পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১০ বছরে চা এর নিলাম মূল্য প্রতি কেজিতে ০.১৬ % , শ্রমিক মজুরি ৭৩.৯১ % এবং
উৎপাদন ব্যয় ৪৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতঅবস্থায় চা শিল্পে উৎপানদনশীলতা বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই, এই লক্ষ্যে শ্রমিক মালিক কে একসাথে কাজ করতে হবে এবং সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার প্রতি সম্মান রেখে বাগানমালিকগণ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যকার সুদীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক বিদ্যমান সুসম্পর্ক চা শিল্পের উন্নয়নের ধারা অক্ষুন্ন রেখে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাসহ জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাচীনতম এ শিল্পের অবদান অব্যাহত থাকবে।
-শিশির