ডেস্ক রিপোর্টঃ
পরিবেশের যথাযথ সংরক্ষনের উপর আমাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা নির্ভরশীল। শব্দদূষণ নীরব ঘাতক। শব্দদূষণের ভয়াবহতার ফলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
শব্দদূষণের উৎসসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি উৎস হল গাড়ি। দিনদিন গাড়ি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা শব্দদূষণের বিষয়ে সচেতন হলে আমরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সফল হবো। ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ১৪ টি প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে প্রায় ১৪০০ চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাবে।
এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আজ ১৯ জুন ২০২১ পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রনে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প এর আওতায় পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এনডিসি সচিব জিয়াউর হাসান এই প্রশিক্ষণ কাযক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, সরকারি ড্রাইভারদের এ ধরণের প্রশিক্ষাণ অন্যদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করবে।
তিনি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রেক্ষিতে অন্যন্য মন্ত্রণালয়/দপ্তরের ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা পরামশ দেন।
একই সাথে এই ভাবে সরকারের অন্যান্য দপ্তর/সংস্থার সাথে সুষ্ঠ সমন্বয়ের উপরও তিনি জোর দেন। আগামী প্রজন্মকে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণযুক্ত একটি শহর উপহার দিতে আমাদের সকলতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বলে তিনি পরার্মশ দেন।
উল্লেখ্য কর্মশালায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের চালকগণ হর্ণ না বাজানোর শপথ করেন।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সূচনা বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বীত ও অংশীদারিত্বদূলক প্রকল্পে পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, আজ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ। পরবর্তীতে সকল মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য পরিবহন চালকের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
তিনি চালকদের সরকারি দপ্তর/মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকুরী করে বিধায় তাদের ট্রাফিক আইন, সরকারি বিধি বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালনে আহবান জানান, যাতে তাদের দেখে অন্যরা শিখতে পারে এবং অন্যান্য চালকদের শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে উদ্ব্দ্ধু করতে পারে।
কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, শব্দদূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০-২০২২ মেয়াদে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রনে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরী। ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর সচিবালয় ও আগারগাঁও এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষনা করেছে। এর বাস্তবায়ন চালকের উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত গাড়ি শব্দদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ব্যক্তিগত গাড়ি অন্যান্য গাড়ির চেয়ে ১৯.৪১ শতাংশ বেশি শব্দদূষণ করে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের সাথে যারা যারা যুক্ত তাদের মধ্যেও শব্দদূষণের ক্ষতিকর বিষয়গুলো তুলে ধরা প্রয়োজন।
অপর এক প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান প্রফেসর শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞান যত এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের জীবন সহজ হয়ে উঠছে। সেই সাথে আমাদের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
শব্দদূষণ শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে। শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্লান্তি, অবসাদ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ ইত্যাদি রোগেরও অন্যতম কারণ শব্দদূষণ। শব্দদূষণে শিশুদের স্বাস্থ্যে ও গভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যে ও তাদের আগত সন্তানদের ওপর বিরেূাপ প্রভাব ফেলে।
বিআরটিএ এর পরিচালক লোকমান হোসেন মোল্লা বলেন, বিআরটিএ শব্দদূষণ বিষয়ে সচেষ্ট। আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলোতে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তর এর সাথে আমরা একসাথে এই বিষয়ে কাজ করে যাবো।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক তেজগাঁও) এস এম শামীম বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে স্প্রীড গান থাকা র্শতওে গাড়ি চালকগণ ক্রমাগতভাবে ট্রাফিক রুল, স্পীড রুল না মানার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি এই বিষয়ে জানান মেশিন দিয়ে ৫ মিনিটে ১৭টি মামলা করা হয়েছে। আমাদের চালকদের মাঝে আইন না মানার প্রবনতা রয়েছে।
তিনি জানান, গত বছর ১১৫টা মামলা হাইড্রোলিক হর্ণের জন্য দায় করা হয়েছে। মামলা দিয়ে শব্দদূষণরোধ করা সম্ভব নয় এজন্য প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মুহাঃ সোলায়মান হায়দার বলেন, চালকদের শব্দদূষণের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বিশেষ করে রাস্তায় পথচারীদের প্রাধান্য দেয়া। অযথা হর্ন বাজিয়ে পথচারীকে বিব্রত না করা। রাস্তায় চলাচলের সময় সাইনগুলো ভালো করে লক্ষ্য রাখা। বিশেষ করে যে সকল এলাকা নিরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সেখানে হর্ন বাজানো থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, শব্দদূষণ হল নীরব ঘাতক। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার একটি ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। বিশেষ করে এই ধরনের প্রশিক্ষণ ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত করতে হবে। বিআরটিএ এবং পুলিশ বিভাগের সাথে সমন্বয় করে এই ধরনের প্রশিক্ষণ পরিচালিত করতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, শব্দদূষণের ভয়াবহতার ফলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এজন্য শব্দদূষণরোধে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারদের সম্পৃক্ত ও সচেতন করা জরুরি। আমাদের চালকদের হর্ণ বাজানোর প্রবণতা কমাতে হবে। বিশেষ করে এম্বুলেন্স চালকদের শব্দদূষণরোধে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
তিনি জানান, অযথা হর্ন বাজানো সঠিক নয় জেনেও ড্রাউভাররা হন বাজান। তিনি এই অভ্যাস থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য সকলকে আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে শব্দ সৃষ্টি হলেও গাড়ি হচ্ছে অন্যতম কারন। রাইড শেয়ারিং এর কারণে গাড়ির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই আমরা চালকরা যদি সচেতন না হই, তাহলে শব্দদূষণের মত নীরব ঘাতককে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমাদের হাইওয়ের পাশে বিভিন্ন রকম স্থাপনা নির্মান হচ্ছে। এ বিষয়গুলোও নগর পরিকল্পনাবীদদের লক্ষ রাখা উচিত।
আগামীতে পরিবেশ অধিদপ্তর নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত আগারগাঁও এলাকায় ডিএমপির সহযোগিতায় নিয়মিত মোবাইল কোট পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা এর সঞ্চালনায় প্রশিক্ষনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের চালকগণ।
-শিশির