স্বাস্থ্যঃ
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সহজে এবং নিরাপদে রোজা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। কিছু নিয়ম মেনে ডায়াবেটিস রোগীরা সহজে রোজা রাখতে পারবেন।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসিইডিবি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানায়।
রজব মাসের জন্য এসিইডিবি ঘোষিত ডায়া-রমজান সচেতনতা মাস কর্মসূচি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে সংগঠনের পক্ষ থেকে রমজানকে সামনে রেখে এক মাসের কর্মসূচির পাশাপাশি নিরাপদে ডায়াবেটিস রোগীর রোজা পালনে কিছু কর্মসূচি তুলে ধরা হয়।
এসিইডিবি বলছে, রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ। তাই রোজা রাখা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্য অবশ্যই করণীয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ জন ডায়াবেটিস রোগী রোজা রেখে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখেন।
কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখেন, তারা কিছু জটিলতার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে, রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসিমিয়া), ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস এবং পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনে ভুগেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের প্রাক্তন সচিব ডা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণা দেখা গেছে, রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে যারা রোজা রাখেন তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়াসহ অন্য জটিলতা রমজানের পূর্বের চেয়েও অনেক কম হয়।রোজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।
ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানের কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে জনাব প্রফেসর মো. ফরিদ উদ্দিন, এসিইডিবি, সভাপতি বলেন, মুসলমানরা আত্মশুদ্ধির জন্য এই এক মাস রোজা রাখতে চান। ডায়াবেটিসের রোগীরাও এর ব্যতিক্রম নন।
রোজায় যেহেতু অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয় এবং ডায়াবেটিসের রোগীরা ইনসুলিন নেন বা মুখের ওষুধ খান সেহেতু তাদের বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় রমজান মাসে। সবার আগে প্রয়োজন নিয়ত করা এবং পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা।
খাদ্য, ব্যায়াম ও ওষুধের সমন্বয় করে নিতে পারেন। রমজানের আগেই নফল রোজা রেখে অভ্যাস করে নিতে পারেন।
প্রফেসর ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ, সাধারন সম্পাদক, এসিইডিবি বলেন, কিছু বিষয় আমরা একটু সচেতনভাবে ভাবলেই সমাধান করা সম্ভব।
যেমন, ডাক্তারের সাথে কথা বলে ৩ বারের ওষুধ এক বা দু’বারে নিয়ে আসতে পারেন। দিনের ওষুধ রমজানের আগে থেকেই রাতে খাওয়ার নিয়ম করে নিতে পারেন।
সংগঠনের বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে পারবেন। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ডায়াবেটিস এমন কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি।
ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানের কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছেন তারা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নিরাপদে ডায়াবেটিস রোগীর রোজা পালনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ড্রোক্রাইন ডিপার্টমেন্ট সর্বস্তরে জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে।
রমজানের আগে এই হাসপাতালের এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্টরা সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশের এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্টদের প্রাণের সংগঠন ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসিইডিবি) ২০২৩ সালের অক্টোবরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে আরো গুরুত্বের সাথে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য রজব মাসকে ‘ডায়াবেটিস ও রমজান সচেতনতা মাস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় রজব মাসের প্রথম শুক্রবার ২০২৩ সালে ২৭ জানুয়ারি ঢাকা ক্লাবে এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়, যা বিশ্বে এই প্রথম।
রজব মাসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, ডায়াবেটিস রোগীদের প্রশিক্ষণ, মসজিদের খতিবদের সাথে আলোচনা এবং বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
-শিশির