অনলাইন ডেস্ক:
বড় স্বপ্ন নিয়েই রাজধানী শহরে এসেছিলেন মারিয়া টাম্বো। আমাজন জঙ্গলের গহীন গ্রাম থেকে লিমায় এসে বাসা ভাড়া করেছিলেন, যাতে বড় মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো যায়। গ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মানুষ হবে তার মেয়ে এমিলি। একটি স্কলারশিপও জুটেছিল মেয়ের। খরচ জোগাড়ে নিজে একটি হোটেলে কাজ নিয়েছিলেন মা মারিয়া।
মেয়েকে নিয়ে মায়ের স্বপ্ন যেন গুঁড়িয়ে দিল করোনাভাইরাস মহামারি। পেরুতে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে বড় সংকটে পড়েন মারিয়া। একেবারে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ নেই। সন্তানদের খাবার জুটছে না। এরইমধ্যে সরকারি সিদ্ধান্তে ২ মাস কোয়ারেন্টাইনে পড়েন তারা। দুই মাস কোয়ারেন্টাইনে থেকে বাসা ভাড়া দেওয়া বা খাবার জোগাড় করার মতো কোনো পয়সা নেই হাতে। উপায়ন্তর না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে ফেরার।
কিন্তু সব গণপরিবহন বন্ধ। কীভাবে যাবেন, বাড়ি তো আর কাছে নয়, ৩৫০ মাইল দূর। সঙ্গে তিন-তিনটি মেয়ে। একদিনে করোনার হানা, অন্যদিকে নিরন্ন, বাঁচতে হলে পালাতে হবেই।
সবচেয়ে ছোট্ট মেয়েকে পিঠে ঝুলিয়ে আর দুজনকে দুই হাতে ধরে পথে নামলেন মারিয়া। বড় মেয়ের কাঁধে ব্যাগ।
হাঁটা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই! সামনে সাড়ে তিনশ’ মাইল পথ। গন্তব্য আমাজনের গহীন উসায়ালি অঞ্চল।
মারিয়া টাম্বো বলেন, আমি জানতাম, নিজ সন্তানদের কী ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে যাচ্ছি কিন্তু আমার কোনও বিকল্পও ছিলো না। হয় আমাকে এই চেষ্টা করতে হতো অথবা নিজের ঘরেই না খেয়ে মরতে হতো। মারিয়ার অভিযোগ, ২ মাস থেকে তিনি ঘর থেকে না বের হলেও সরকার কোনও খোঁজ নেয়নি তাদের। এ কারণেই জঙ্গলের পথে ৩৫০ মাইল হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
মে মাসের শুরুর ঘটনা। দুই মেয়ের হাত ধরে, এক মেয়েকে পিঠে নিয়ে হাঁটছেন তো হাঁটছেন মারিয়া। দিনের বেলা রোদ্রতাপ, রাতের অন্ধকার। পথে ক্ষুধা-তৃষ্ণা। একদিনতো ভেঙেই পড়লেন মা। তারপর নিজেই নিজেকে সাহস দিলেন, পথ পেরুতেই হবে। পথে এক ট্রাক ড্রাইভারের কাছ থেকে পেলেন কিছু খাবার। ওই ড্রাইভার তার সুবিধামতো কিছু পথ ট্রাকে এগিয়ে দিলেন। অবশেষে সাত রাত সাতদিন পর আমাজনের জঙ্গলের কিনারা পেলেন। কিন্তু জঙ্গলের পথে ঢুকতেই আটকালো পুলিশ। লিমা শহর ছেড়ে পলায়নরত মানুষকে ঠেকানোর জন্য পুলিশ টহল দিচ্ছে।
তবে পুলিশকে মিথ্যেই বলতে হলো মা-মেয়েদের। মারিয়া বললেন, সামনেই আমাদের খামার। আমরা সেখানেই থাকি।
এরপর নানান জেরার পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দিল। অবশেষে জঙ্গল পেরিয়ে এক রাতের বেলায় নিজের বাড়িতে পৌছতে পারলো মারিয়া ও তার মেয়েরা। তবে তাদের স্বাগত জানাতে এলো কেবল বাড়ির পোষা কুকুরটি। মারিয়ার স্বামী বা শ্বশুর করোনার ভয়ে কেউই কাছে এলেন না। এতোদিন পর দেখা, তাও কার একটু আলিঙ্গনও মিললো না।
পেরুতে বুধবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষ। মারা গেছেন ৭ হাজারের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে হয়তো পালিয়ে জঙ্গলে এসে বেঁচে গেছেন সন্তানদের নিয়ে সাড়ে তিনশ’ মাইল হেঁটে পেরুনো মারিয়া।
জঙ্গলে কষ্ট পেলেও আর লিমায় ফিরতে চান না মারিয়া বা তার মেয়েরা কেউ। খবর: সিএনএন
-এফকে