অনলাইন ডেস্ক:
বেশিরভাগ জায়গা থেকে লকডাউন উঠে গেছে। গণপরিবহনও চালু হয়েছে। এবার ফিরতে হবে কাজে। যদিও কমেনি করোনার সংক্রমণ। তাই রাস্তায় বের হবার আগে আগে করোনা এড়াতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। যেমন-
১. রাস্তায় বের হবার আগে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। কর্মক্ষেত্রে যাবার আগে এটি পরা খুবই জরুরি। অনেকেরই অভ্যেস থাকে বারবার মুখে হাত দেওয়া, মোবাইলের মাউথপিস ঠোঁটের কাছে ধরে কথা বলা। মাস্ক পরা থাকলে সচেতন না থাকলেও এ সব থেকে বিরত হবেন। নোংরা হাত মুখে না গেলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যাবে। পাশাপাশি কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও তার হাঁচি, কাশি থেকে সংক্রমণের ভয় থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মাস্ক পরলেই হবে না, এর ব্যবহারবিধিটা জানাটাও জরুরি। তারা বলছেন, সুতির কাপড়ের মাস্ক পরলে মোটা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহারের পর প্রতিদিন ধুতে হবে। তা না হলে তিন -চারদিন পর একই মাস্ক ব্যবহার করা যাবে। মাস্ক পরার পরে তাতে আর হাত দেওয়া যাবে না।
বিশেষজ্ঞদের বলছেন, গন্তব্যে পৌঁছে মাস্ক খুলে রাখতে চাইলে ছোট ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। মাস্ক খুলে টেবিলের উপরে ফেলে না রেখে ব্যাগে ভরে রাখুন। ফেরার সময়ে আবার পরে নিন। মাস্ক খোলা ও পরার আগে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
২. অনেকেরই কথায় কথায় চুলে হাত দেওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেকে আবার চোখ কচলান। গ্লাভস পরে থাকলে চট করে চোখে বা মুখে হাত যাবে না। এ কারণে বাইরে বের হলে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তবে গ্লাভস পরে বাইরের সব কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে এটা পরিষ্কার করতে হবে। ধোয়া গেলে সাবান পানিতে ধুয়ে নিয়ে আবার ব্যবহার করতে পারেন।
৩. রাস্তাঘাটে, বাজারে, কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। অফিসে বসার ব্যবস্থা পাশাপাশি হলে চেয়ারের মাঝের ব্যবধান বাড়িয়ে নিন।
৪. বেশির ভাগ জিনিস হাত দিয়ে না ধরাই ভালো। যেমন- হাত দিয়ে কোনও দরজা না খুলে, পা দিয়ে ঠেলে খুলতে পারেন। একান্তই স্পর্শ করতে হলে আঙুলের মাথা দিয়ে করুন। পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। কনুই বা হাতের উল্টো দিক দিয়ে রাস্তার জিনিস ধরবেন না। পাবলিক টয়লেটে ব্যবহারে সাবধান থাকুন। বেসিনের কল সাবান দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করুন।
৫. কর্মক্ষেত্রে অনেকেই সহকর্মীর সঙ্গে খাবার ভাগ করে খান। আপাতত তা বন্ধ করুন। জন্মদিন উপলক্ষে একই কেক কেটে সেই টুকরো সকলে খাওয়ার অভ্যাসও বদলান।
৬. কর্মক্ষেত্রে বা গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ব্যাগে রাখতে হবে ৬০-৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার। যদি কাজের জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে নিজের কাছে রাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন।
প্রত্যেকের কাজের জায়গা আলাদা, কাজের ধরন আলাদা।তাই কর্মক্ষেত্রের সব জিনিস স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে কি না সে দিকেও নজর রাখুন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে এড়াতে নিজেকেও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে । এজন্য পাশের মানুষটির করোনা হয়েছে কি না যেমন খেয়াল রাখবেন, তেমনই নিজের শরীরের দিকেও চোখ রাখুন। নিজের বা পরিবারের কারো জ্বর, কাশি দেখা দিলে হোম কোয়ারেইন্টাইনের উদ্যোগ নিতে হবে।
করোনা এড়াতে কর্মক্ষেত্রে সতর্কতা গ্রহণের পাশাপাশি বাড়ি ফিরেও কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। যেমন-
১. বাইরের ব্যাগ নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করলে ধুয়ে নিতে পারবেন। চামড়ার ব্যাগ হলে বাড়িতে ফিরে ব্যাগটা এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে কারও হাত পড়বে না।
২. জুতা মোজা খুলে সোজা বাথরুমে চলে যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় বাড়ির দরজায়, সুইচে -কোথাও দেবেন না। বাড়ির লোককেই বাড়ির ও বাথরুমের দরজা খুলে দিতে বলুন। হাত ধুয়ে মাস্ক ও চশমা খুলে পরিষ্কার করুন। এরপর পোশাক খুলে বালতিতে সাবান পানিতে ভিজিয়ে দিন। জামাকাপড় কেচে গরম পানিতে ধুয়ে নিন। রোদে জামাকাপড়গুলো শুকিয়ে নিন।
৩. সাবান মেখে, শ্যাম্পু দিয়ে গোসল সেরে নিন। বড় চুল হলে স্কার্ফ বেঁধে বেরোতে পারেন। পায়ের তলাও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
৪. মোবাইলটাও ভালো করে স্যানিটাইজ় করে নিতে হবে।
গণপরিবহন ব্যবহারে এবং বাইরে আরো কিছু সতর্কতা মেনে চলবেন। যেমন-
১. ভিড় যানবাহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এজন্য কিছুটা সময় নিয়ে বের হোন। একই রুটে হলে অফিসের কয়েক জন একটা গাড়ির ব্যবস্থাও করতে পারেন। তবে পিছনের সিটে দু’জনের বেশি বসবেন না।
২. অফিসের ল্যান্ডফোন কম ব্যবহার করাই ভালো। রিসিভার বেশি মুখের কাছে নিয়ে কথা বলবেন না। ফোনের কাজ শেষ হলে মাউথপিস স্যানিটাইজ় করে ব্যবহার করুন।
৩. রাস্তাঘাটে বাসে-গণপরিবহনে উঠলে অনেক জায়গায় হাত পড়ে। তাই মোবাইল ব্যাগে রাখুন। গন্তব্যে পৌঁছে হাত ধুয়ে মোবাইল বার করে চেক করে নিন।
৪. এটিএম থেকে টাকা তোলার পরে, সেই টাকা ও কার্ড মানিব্যাগের একটি আলাদা পকেটে রাখুন। হাতে স্যানিটাউজার ব্যবহার করুন।
-এফকে