অর্থনীতিঃ
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত বাংলাদেশে আয় ও ধন বৈষম্য বিষয়ক জাতীয় সেমিনারে আলোচকরা ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য নিরসনে দূর্ণীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধ এবং সুবিধাভোগি ও মধ্যস্বত্বভোগিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলানায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মর্শিদ,অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ ও সহসভাপতি এ জেড এম সালেহ আলোচনায় অংশ নেন।
সেমিনারে অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম ‘বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য: সমাধান কোন পথে? ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন,মাতৃমৃত্যুর হার ছাড়া মানব উন্নয়নের অন্যান্য সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে।
কিন্তু দেশে ক্রমান্বয়ে আয় বৈষম্য বেড়ে চলেছে। কেবল মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নকে বিচার করলে চলবে না। যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে, তার ভাগ যেন সমাজের প্রান্তিক মানুষ পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন,বন্টনের ন্যায্যতাসহ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে যেতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে রেখে প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। তিনি বলেন,বাংলাদেশে প্রায় সোয়া এক কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার মার্কিন ডলারের ওপরে। অথচ কর দেন মাত্র ২০ লাখ মানুষ। তাই রাষ্ট্রযন্ত্রকে উচ্চ আয়ের মানুষের নিকট থেকে কর আদায় বিশেষ করে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা কার্যকর করতে শক্তিশালী ভূমিকা নিতে হবে।
ড. মইনুল ইসলাম দূর্নীতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা উল্লেখ করে তার প্রবন্ধে বলেন,স্বজনতোষী পুঁজিবাদের কারণে আয় বৈষম্য বাড়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছে পঞ্জীভূত হচ্ছে। এর সাথে সাথে নিন্মবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন প্রবৃদ্ধির ন্যাষ্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আয় বৈষম্য ক্রমে বাড়তে থাকার প্রবনতাকে দেশের আসন্ন বিপদ সংকেত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন,জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্যে দিয়ে দেশে স্বজনতোষী পুঁজিবাদ ও পুঁজি লুন্ঠনের যাত্রা শুরু হয়। দূর্ণীতি ও পুঁজি লুন্ঠনের মাধ্যমে গত ৪৪ বছরে দেশে লাখ লাখ ব্যবসা নির্ভর পুঁজিপতি, মার্জিন-আত্মসাতকারি রাজনৈতিক নেতাকর্মী,দূর্নীতিবাজ আমলা এবং সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদার রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ধনাঢ্য ও উচ্চবিত্ত গোষ্ঠির অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।
তিনি বৈষম্য বৃদ্ধির শক্তিগুলোকে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করার জন্য রাষ্ট্রকে জনগনের স্বার্থের পাহারাদারের ভূমিকা পালনে বাধ্য করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
মইনুল ইসলাম বলেন, আয় ও সম্পদ বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে হলে দূর্ণীতি নিরসন করতে হবে। এর জন্য সকলকে দূর্ণীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তিনি।
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত সম্পদ বন্টনের ন্যায্যতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, রাষ্ট্রকে কেবলমাত্র প্রবৃদ্ধির পূজা করলে হবে না। সেই প্রবৃদ্ধি দিয়ে আসলে মানব উন্নয়ন হচ্ছে কি-না সেটা দেখতে হবে। তিনি বলেন,ধরুন দুই অংকের প্রবৃদ্ধি হলো, কিন্তু সেটা যদি সমাজের নিচু তলায় না যায়,তাহলে এই প্রবৃদ্ধি দিয়ে কোন লাভ নেই।
তিনি আংশকা প্রকাশ করেন যে নব্য উদারবাদী পুঁজিবাদ অর্থনীতিকে ধংবসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মূর্শেদ সমাজে আয় ও সম্পদ বৈষম্য নিরসনে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায়ভিত্তিক ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহবান জানান।
-শিশির