আমি Bibi Russell এর দেশের মেয়ে, আমি গর্বিত

মনিরা সুলতানা পাঁপড়ি, মার্চেন্ডাইজারঃ

আমি Bibi Russell এর দেশের মেয়ে, আমি গর্বিত।

আজকে তাঁর জন্মদিনে কিছু বলতে চাই, কোন তথ্য ভুল হলে মাফ করে দেবেন বিবি রাসেল। 🙏
Many many happy returns of the day Bibi Russell!

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি দৈহিক উচ্চতার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষটাকে প্রথম যখন সামনাসামনি দেখি একটা ফ্যাশন শো তে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিলো ইনি সেই লিজেন্ডারি Bibi Russell !!

এত সাধারণ এত হাম্বল আর লো প্রোফাইলে কোন বাংগালী সেলিব্রেটি কে আগে দেখিনি।
২০২২ এ বসেও যখন বাংগালী মেয়েরা কোরিয়ান মেয়েদের মত দুধে আলতা রঙ এর পেছনে নিজের আত্নসম্মান বিসর্জন দিয়ে ছুটছে, পেছন ফিরে তাকালে দেখি,পঞ্চাশ এর দশকে জন্ম নেয়া এই

শ্যাওলা শ্যামল মেয়ে চাঁপাফুল এর মতো তার ব্যক্তিত্ব নিয়ে ফুটে উঠেছে। কোন হীনমন্যতা তাকে স্পর্শ করেনি।

১৯৫০ সালের ১৯ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিবি রাসেল। তবে তার পৈত্রিক বাড়ি রংপুরে। তাঁর স্কুল জীবন কেটেছে রাজধানীর টিকাটুলীর কামরুন্নেসা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখান থেকে ১৯৬৬ সালে ম্যাট্রিক এবং পরবর্তীতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।
যে সময়টিতে নারীর জন্য সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করায় এক প্রকার বাহুল্য ছিল সেই সময়ে ১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে যুক্তরাজ্যের লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশনে এই অঞ্চলের সম্পূর্ণ অপ্রচলিত একটি বিষয়ে পড়তে যান। সেখান থেকে ১৯৭৫ সালে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। বিবি রাসেল ওই বছর তার কলেজের ¯পোষাক প্রদর্শনীতে নিজের ডিজাইন করা পোশাকে নিজেই মডেলিং করে হৈচৈ ফেলেন। এরপর বাংলাদেশের বিবিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

মেধা ও ফ্যাশন নিয়ে ব্যতিক্রমী চিন্তার কারণে বিশ্বের ফ্যাশন বোদ্ধাদের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসেন ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার বিবি। ¯পড়াশোনা শেষের পর পরই তিনি মডেলিংয়ের প্রস্তাব পান ইভস সেন্ট লরেন্ট, কার্ল লেগার ফিল্ড, জর্জিও আরমানির মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের তরফ থেকে।
১৯৭৬ সালে মডেলিং ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত একটানা ১৬ বছর তিনি ছিলেন ভগ, হারপারস বাজার এবং কসমোপলিটনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মডেল। বিশ্বের অভিজাত প্রায় সব ব্র্যান্ডের মডেল হয়েছেন। যেমন কোডাক, কোকো শ্যানেল, বিএমডব্লিউ, ইভস সেন্ট লরেন্ট, টয়োটা, কার্ল লেগার ফিল্ড, জর্জিও আরমানি ইত্যাদি। ক্যাটওয়াক করেছেন নাওমি ক্যাম্পবেল, ক্লডিয়া শিফারের মতো বিশ্বখ্যাত সুপার মডেলদের সঙ্গে।

১৯৯৪ সালের দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের উন্নয়ন,আধুনিকায়নের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁতে বোনা কাপড়, বিশেষ করে গামছা এবং লুঙ্গি বিদেশে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

২০১০ সালে তিনি ‘দ্যা ক্রস অফ অফিসার অফ দ্যা অর্ডার অফ কুইন ইসাবেলা’ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

বিবি রাসেলের ফ্যশন আইকন রবি ঠাকুর ও বঙ্গবন্ধু । এ দুজনকে নিয়ে তাঁর মুগ্ধতা অপরিসীম। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা শেখ মুজিব কোট পরছি। ওই কোট ডিজাইনে রয়েছে পলিটিক্যাল আইডলজি। রবি ঠাকুরের ব্যাপারে বলতে গেলে, রবি ঠাকুরে প্রতি আমার মুগ্ধতা এমনই ছিল যে, আমি আট মাস শান্তিনিকেতনে ছিলাম। ওনার সব ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ছবিগুলো দেখতাম আর ভাবতাম, এগুলো রঙিন হলে কেমন দেখাত।

যখন ব্রিটেনে যেতেন ডাবল ব্রেস্ট-এর পিন স্ট্রাইপ জ্যাকেট পরতেন। আমি ওটার রঙ চিন্তা করতাম। ওনার মতো আরেকজন স্টাইলিশ আমার চোখে পড়ে না। রবীন্দ্রনাথ আমার প্রেরণা, আমার শক্তি।’ অন্য দিগন্ত।

সম্প্রতি ‘প্রীতিলতা’ সিনেমায় কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। তিনি খুবই আনন্দিত যে প্রীতিলতার মতো একজন সংগ্রামী নারীকে নিয়ে বাংলাদেশে সিনেমা হচ্ছে এবং এর সঙ্গে তিনি যুক্ত। এও জানান, এমন কাজ ভবিষ্যতে হলে, এর সঙ্গে তিনি থাকতে চান; যেমন—বেগম রোকেয়াকে নিয়ে। তবে অভিনয়ের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।

স্বীকৃতি!!
স্বীকৃতির তালিকা করতে গেলে তা অনেক দীর্ঘই। এর মধ্যে রয়েছে এলি ম্যাগাজিনের ‘উইম্যান অব দ্য ইয়ার’ ১৯৯৭। লন্ডন আর্ট ইউনিভার্সিটির অনারারি ফেলো ১৯৯৯, ইউএস গুডউইল অ্যাম্বাসেডর ২০০৮, ইউনেস্কো স্পেশাল অ্যানভয়; ডিজাইন ফর ডেভেলপমেন্ট ১৯৯৯, ক্লাব অব বুদাপেস্টের ‘ইউ ক্যান চেইঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ ২০০৪-সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়া শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন ইউনেস্কোসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে। তবে বাংলাদেশ থেকে যে দুটি স্বীকৃতি পেয়েছেন—এর মধ্যে বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বেগম রোকেয়া পুরস্কার—এই দুটোকে তিনি বিশেষ মর্যাদার বলে মনে করেন।

‘ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট’—এই শ্লোগানকে তিনি বাস্তবায়িত করতে চান। চান বাংলাদেশের বুননকে আরো বেশি মর্যাদার জায়গায় নিতে যেতে।

আমার দেখা সবচেয়ে নীরবে দেশের জন্য তাঁর নিজের জায়গা থেকে কাজ করে যাওয়া ট্রু লিজেন্ড হলেন বিবি রাসেল।

অনেক অনেক দিন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকুন বিবি। আপনাকে আমাদের দরকার, ভীষণ দরকার। গত পঞ্চাশ বছরে আরেকটা বিবি রাসেল পাইনি আমরা, আর পাবো কিনা জানিনা, যার নাম ধরে গর্ব করে বলবো, আমি তাঁর দেশের মানুষ।

-ফেসবুক থেকে

FacebookTwitter