আমিরুল ফয়সলঃ
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে আনকোরা একজন নতুন নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তাঁর নাম ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল (জন)। প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের ছেলে তিনি। জীবদ্দশায় জননেতা আব্দুল জলিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এই আসনের নির্বাচিত এমপি ছিলেন।
১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারি তৎকালীন নওগাঁ মহকুমার চকপ্রাণ মহল্লায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল জলিল। তার বাবার নাম ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মা জরিনা ফয়েজ। তাঁর দুই স্ত্রী জেসমিনা জলিল ও রেহানা জলিল। দুই মেয়ে ডা. শারমীন জলিল জেসি ও ডা. মৌমিতা জলিল জুলি এবং দুই ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন ও জুমায়েত জলিল জুম্মা।
অনেকের কাছে, নওগাঁ প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের জেলা হিসেবে সুপরিচিত। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশেস্নষকদের কাছে জেলা সদরের এই আসনটি ভিভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, আব্দুল জলিলের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর চমকপ্রদ রাজনৈতিক ভূমিকার কারণেই পুরো নওগাঁ জেলায় আওয়ামী লীগের এমন শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে।
একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা গঠিত। জাতীয় সংসদের ৫০ নম্বর নির্বাচনী এ আসনটিতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৩০ জন। এর মধ্যে পু্রুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৯০ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৪০ জন।
১৯৯১-৯৬ সালে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন আলহাজ মো. শামসুদ্দিন আহমেদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল। ২০০১ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই আসনের এমপি ছিলেন আব্দুল জলিল। আর এ সময়ের মধ্যে নওগাঁর অনেক উন্নয়ন হয়।
২০১৩ সালে ৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আব্দুল জলিল। তাঁর অবর্তমানে নওগাঁয় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জেলা শাখার দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর নওগাঁ জেলা আ’লীগ স্পষ্টত দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে যার একটি ‘জলিল লীগ’ আর অন্যটি ‘মালেক লীগ’ নামে পরিচিত। বলাই বাহুল্য যে, এবারও এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
তবে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নওগাঁ-৫ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আ’লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও জেলার ইয়াং বাংলা অর্গানাইজার ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন। তিনি বয়সে যেমন তরুণ রাজনীতিতেও তেমন নবীন। মাত্র তিন বছর আগে ২০১৫ সালে ব্যারিস্টারি পড়াশুনা শেষ করেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন বলেন, তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। বাবা সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ব্যারিস্টারী পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে বিদেশের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে মৃত্যুর আগপর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নওগাঁবাসীর বিপদে আপদে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি নওগাঁবাসীর জন্য অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। তবে এখনও আরাধ্য অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অসমাপ্ত রয়েছে। তাঁর কীর্তিমান বাবার রাজনৈতিক অবদানের মূল্যায়ন হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আগামীতে দল থেকে বিজয়ী হলে তিনি তাঁর প্রয়াত বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবেন। নির্বাচনী ফল যাই হোক, নওগাঁর জনগণকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের কাজগুলো করে যাবেন।