অনলাইনঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করলে এ দেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না।’
বুধবার জাতীয় সংসদে বিএনপির নারী সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষ হত্যার রাজনীতি করে না। প্রতিহিংসার রাজনীতিতেও বিশ্বাসী নয়। আমরা যদি তা–ই বিশ্বাস করতাম, তাহলে এদেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। কারণ বিএনপির দ্বারা আমরা যে পরিমাণ হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি, তা আর কেউ হয়নি।’
তারকা চিহ্নিত প্রশ্নে বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে এখন মানুষ হত্যা থেকে মশা মারা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রয়োজন হয়, যা রাষ্ট্রের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়া, অকার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা একটি কার্যকর রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত। রুমিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, এই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে না?
জবাবে এই প্রশ্নকে অনাকাঙ্ক্ষিত, অসংসদীয় ও অবান্তর প্রশ্ন হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সংসদ সদস্য ‘মানুষ হত্যা’ আর মশা মারাকে একই সমতলে নিয়ে এসেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারপ্রধানের অন্যতম কাজ এবং দায়িত্ব হলো সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের কাজের সমন্বয় করা। মন্ত্রীদের কাজের তদারকি করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ আমাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। আরাম-আয়েশের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে জনগণের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার একটি আলাদা জায়গা রয়েছে। সেটাই আমি প্রতিপালন করার চেষ্টা করি। সেই জন্যই দিনরাত পরিশ্রম করি। কোনো প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করার জন্য নয়, সব প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট রাখি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তা না করে সংসদ সদস্যের (রুমিন ফারহানা) নেত্রী খালেদা জিয়ার মতো দুপুর ১২ পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালেই কি প্রশ্নকারী খুশি হতেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অকার্যকর রাষ্ট্রের উদাহরণ বিএনপি সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসত রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন ব্যক্তির কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী ঘুমিয়ে থাকতেন, সিদ্ধান্ত নিতেন তাঁর পুত্র, হাওয়া ভবন থেকে। মন্ত্রী-সচিবেরা হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন।
বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বসেরার জায়গা করে নিয়েছে। এসব আপনাআপনি হয়নি। সবার পরিশ্রমে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান অকার্যকর থাকলে এসব অর্জন সম্ভব হতো না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে খুনিদের সহায়তায় ক্ষমতায় বসেছিলেন। দেশে হত্যা, ক্যু, অপরাজনীতি শুরু করেন। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সংস্কৃতি চালু করেন। একটা পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করে দেন জিয়াউর রহমান। এ কারণে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের মুখে মানুষ মারার বিষয়টি অবলীলায় চলে আসে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের চেয়েও তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এক কাঠি সরেস, সে প্রমাণ তিনি রেখেছেন।
এদেশে জঙ্গি সৃষ্টি, অগ্নি সন্ত্রাস, বোমা হামলা, মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা আত্মসাৎসহ হেন অপকর্ম নেই যে তিনি ও তাঁর দুই পুত্র এবং দলের নেতারা করেননি। এ সকল ধারণা থেকেই প্রশ্নকারী আমাকে খালেদা জিয়ার সমান্তরালে ফেলেছেন।’
-ডিকে