নাহিদা আহমেদ, বি.এস.সি, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ, ন্যাশনাল কলেজ অফ হোম ইকোনমিক্সঃ
সাধারণত যত্ন বলতে আমরা বুঝি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে শিশুকে আদর আহ্লাদেে বড় করে তোলা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যত্ন বলতে বোঝায় দেহ ও দেহাভ্যন্তরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে রোগমুক্ত রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভাবে যেন শিশুর বৃদ্ধিও বিকাশ ঘটে তার প্রতি খেয়াল রাখা।
শিশুর জন্মের পর ২-৩ দিন মায়ের বুকের যে দুধ বের হয় তাকে কোলেস্ট্রাম বলে যা শিশুর প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। এরপর ৬ মাস শিশুকে একটানা বুকের দুধ খাওয়াতে হয়, এসময় মায়ের দুধ ছাড়া কোনো প্রকার খাদ্য বা পানীয় শিশুকে দেওয়া উচিত নয় । ৬ মাসের পরবর্তী সময়ে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি তরল/নরম এমন খাবার খাওয়ানো উচিত যা সহজেই হজম হয়। খাবারগুলো অবশ্যই কম মশলা ও কম তেল তৈরি করা উচিত। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সাধারণ খাবারে তাকে অভ্যস্ত করাতে হবে। এখন জেনে নেই পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে কীভাবে শিশুর সঠিক যত্ন নেওয়া যায়-
➡শিশুর সঠিক শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশে খাদ্যঃ-
*প্রোটিন জাতীয় খাদ্যে যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধের সামগ্রী শিশুর দেহ কোষ গঠনে সাহায্য করে। ফলে এ জাতীয় খাবার খাওয়ালে শিশুর বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে। এবং এ জাতীয় খাদ্য থেকে শিশু পর্যাপ্ত শক্তিও পায়। এছাড়াও এসকল খাবারে জিংক থাকে যা শিশুর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ননীসহ দুধ, রান্নার তেল,চর্বিযুক্ত মাছ ও মাংস থেকে ফ্যাট পাওয়া যায় যা শিশুর শরীরের সঞ্চিত থেকে পরবর্তীতপ অন্য পুষ্টি উপাদানের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের কার্য সম্পাদনে সাহায্য করে।
*ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য যেমন -দুধ ও দুধের সামগ্রী,ডিম,ব্রকলি ইত্যাদি হাঁড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে।
*আয়রন জাতীয় খাবার দেহের রক্তকণিকা গঠণে সাহায্য করে।আমরা লাল মাংস,লিভার,বাদাম ও আয়রন ফর্টিফাইট শস্য থেকে আয়রন পাই।
*আশ জাতীয় খাবার হলো কার্বোহাইড্রেট এর উৎস। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবার সাথে মিশে দেহ গঠনেে সাহায্য করে।আর আঁশ জাতীয় খাবার যেমন-লাল চাল,লাল আটার রুটি,শাক জাতীয় খাবা, বাদাম ইত্যাদি মল তৈরির কাজে সাহায্য করে ফলে শিশুর পেট পরিষ্কার থাকে।
➡শিশুর মানসিক বিকাশে খাবার-
*বাদাম জাতীয় খাবারেে ভালো মানের ফ্যাট থাকে পাশাপাশি প্রোটিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা শিশু বুদ্ধি বাড়াতে করতে সহায়তা করে।
*ওমেগা-৩ ও আয়োডিন যুক্ত সামুদ্রিক মাছ শিশুর ব্রেইন ফুড হিসেবে কাজ করে।
*ফলিক এসিড যুক্ত সবুজ শাক সবজি (যেমন-শসা,ব্রকলি, ফুলকপি) শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনের কাজে সহায়তা করে।
*ডিম,দুধ ও দুধ জাতীয় সামগ্রী, চর্বি বিহীন মাছ ও মাংস হলো প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। ডিম থেকে প্রোটিনের পাশাপাশি জিংক, আয়রণ, ক্যালসিয়াম পাই যা সঠিকভাবে ব্রেণ গঠনে সাহায্য করে।
➡ রোগ প্রতিরোধে খাবারের ভূমিকা-
*হলুদ,লাল,নীল সহ বিভিন্ন রঙের সবজি ও শাকে ভিটামিন-এ থাকে যা বিটাক্যারোটিনর পরিবর্তিত রূপ।এটির জারণ বিরোধী ধর্ম থাকে যা দেহের মুক্ত রেডিক্যাল এর ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে দেহকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
*ভিটামিন-কে জাতীয় খাবার যেমন সূর্যমূখীর তেল,লেটুস এগুলো এন্টি এক্সিডেন হিসেবে কাজ করে দেহকে রক্ষা করে।
*শস্য,ডাল, ডিমের কুসুম, শুকনো ফল,ডুমুর,কলিজা ইত্যাদি থেকে আয়রন পাওয়া যায় যা দেহে লোহিত রক্ত কনিকা গঠনে সাহায্য করে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
*ডাল, সয়াবিন, বৃক্ক,হৃদপি, শামুকে প্রচুর পরিমাণ তামা থাকে যা শরীরের বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন সি। এ ছাড়া ত্বক ও হাড়ের কোলাজেনের সুরক্ষা দিতে, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন সি উপকারী।
টকজাতীয় সব ধরনের ফলে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। লেবু, মাল্টা, কমলা, জলপাই, আমলকী, আনারস ইত্যাদিতে ভিটামিন সি থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, কাঁচামরিচেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
↪লক্ষ্যণীয় বিষয়ঃ-
*শিশুরা সাধারণত একই রকম খাবার প্রতিদিন খেতে পছন্দ করে না, এজন্য তাদের খাবারেেে পরিবর্তন আনা উচিত।যেমন -প্রত্যেকদিন ডিম দুধ না দিয়ে মাঝে মাঝে ডিম ও দুধ দিয়ে পুডিং বা কাস্টার্ড তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে।
*মাছের কাটা থাকায় শিশুর মাছ খেতে পছন্দ করে না ফলে নানা পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়।এজন্য মাছ দিয়ে কাটলেট তৈরি করে কম তেলে ভেজে দিলে আনন্দেে খেয়ে নিবে।
*বিভিন্ন বাচ্চারা শাক,সবজি খেতে না চাইলে মুরগীর মাংস কিমা করে সাথে সবজি সিদ্ব করে বড়া বা পাকোড়া তৈরি করে দিতে পারেন।
*শিশুর খাবার তৈরিতে বিশুদ্ধ তেল ব্যবহার করুন।এক তেলে বারবার শিশুর খাবার ভাজবেন না।
*শিশুর খাবারে টেস্টিংসল্ট ব্যবহার করবেন না।কারণ দীর্ঘ দিন টেস্টিং সল্ট খেলে তা শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
*বাহিরের ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারে আসক্ত করাবেন না।প্রয়োজনে সে সকল খাবার ঘরে তৈরি করে খাওয়াবেন।
✔মনে রাখতে হবে যে ছোট বেলায় শিশু থাকে কাদার মত তাকে যে গড়নে গড়া যাবে পরবর্তীতে সে সেই রূপ পাবে।
একটি শিশুর খাদ্যাভাস শিশুকাল থেকেই গড়ে ওঠে।এজন্যই একটি শিশুকে প্রকৃত যত্ন নিতে হলে ছোট বেলা থেকেই তার সঠিক খাদ্যাভাসে প্রতি যত্নবান হতে হবে।
-শি