অনলাইনঃ
চির বিদায় নিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সৈরশাসকের তকমা পাওয়া এই রাজনীতিবিদ কাটিয়েছেন বিলাশ বহুল জীবন।
গ্রামের বাড়ি রংপুর থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে তার স্থাবর-অস্থাবর অনেক সম্পত্তি। তবে কত সম্পত্তির মালিক ছিলেন তার সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারেনি।
রবিবার (৭ এপ্রিল) এরশাদ তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি একটি ট্রাস্ট দান করেন। ওই দিন বিকেলে বারিধারার বাসভবনে ৫ সদস্যের ওই ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে লিখিতভাবে সম্পত্তি দান করেন তিনি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে এরশাদের জমা হলফনামার তথ্য মতে, এরশাদের বার্ষিক আয় ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। সম্পদের বিবরণীতে আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, অনির্ধারিত ব্যবসা, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বেতন, সম্মানীর কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
এর বাহিরে তিনি সর্বশেষ গুলশান ও বনানীতে ৬ কোটি ২০ লাখ ও ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা দিয়ে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
এরশাদের ইউনিয়ন ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। তিনি ওই ব্যাংকটির একজন পরিচালকও ছিলেন। সেই হিসেবে ব্যাংকটি থেকে বার্ষিক ৭৪ লাখ টাকা বেতন পেতেন তিনি।
এ বিষয়ে এরশাদের ঘনিষ্ঠ পার্টিও আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডে দান করা সম্পত্তির বর্ণনা দেননি এরশাদ। শুধু দানের কথা বলা হয়েছে। ফলে এরশাদের কী পরিমাণ সম্পত্তি আছে, তা জানা যায়নি।’
দলটির কয়েকজন নেতা বলেন, ‘জানুয়ারিতেও একবার এরশাদ তার সমস্ত সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছেন বলে আমরা শুনেছিলাম। তখন তার সম্পত্তির একটি বিবরণ ও কাকে কী সম্পত্তি দেয়া হলো, এমন কথাও জানতে পেরেছিলাম আমরা।’
নেতাদের তথ্য মতে, এরশাদ তার বড় ছেলে আল মাহিগীর শাদ এরশাদ (রওশনের সঙ্গে থাকে), ছোট ছেলে শাহতা জারাব এরিক (বিদিশার), পালিত কন্যা জেবিন (লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করে) ও ভাই-ভাতিজার মধ্যে বড় সম্পদের বড় অংশ ভাগ করে দেন। কিছু সম্পদ এরশাদের কয়েকজন পালিত কন্যা এবং কিছু সম্পত্তি পার্টির অফিস ও এতিমদের জন্য ট্রাস্টে দেয়া হয়েছে বলেও তখন প্রচার পায়।
এরশাদের মোট সম্পত্তির বিষয়ে দলটির কয়েকজন নেতা জানান, রংপুরে বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি এবং রংপুর সদরের পদাগঞ্জে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। গুলশান-২ এর বাড়িটি রওশন এরশাদকে দিয়েছেন এরশাদ বহু আগেই। বারিধারার ১০ নম্বর দূতাবাস রোডের ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ যেখানে তিনি নিজে বসবাস করেন সেটি তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদের নামে দেয়া হয়েছে।
নেতারা আরো জানান, পালিত পুত্র আরমানকে দেয়া হয়েছে গুলশানের অপর একটি ফ্ল্যাট। রংপুরের সম্পত্তি পেয়েছেন তার ভাই জি এম কাদের ও এক ভাতিজা। রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দান করেছেন।
তারা আরো জানান, কয়েক বছর আগে চলচিত্র পরিচালক শফি বিক্রমপুরির কাছ থেকে কেনা ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়টি এরশাদের ব্যক্তিগত নামে ছিল। এটি তিনি পার্টিকে দান করেছেন। এরশাদের গুলশান বনানী এলাকায় বিভিন্ন মার্কেটে দোকান রয়েছে। এরশাদের নগদ টাকাসহ সম্পত্তি কী কী আছে তা পরিষ্কারভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা জানেন না।
দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘ কী পরিমাণ সম্পত্তি এরশাদের রয়েছে, তা কেউ জানে না। আমরা মুখে মুখে যেটুকু শুনি, সেটুকুই। স্যার নিজেও কোনো দিন এসব নিয়ে গল্প করেনি।’
-কেএম