‘লাইলাতুল কদর’ ফজিলতপূর্ণ রাজনী

ধর্ম, ইসলামঃ
ইসলামের প্রথম নবী ও রাসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে প্রসিদ্ধ নবী ও রাসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত কোনো নবী ও রাসূল বা তাদের উম্মতগণ মহামান্বিত ও ফজিলতপূর্ণ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’ প্রাপ্ত হননি।

কেবল শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী এবং রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর উম্মতের প্রতি আল্লাহ তা’আলর অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদিয়া ‘লাইলাতুল কদর’।‘লাইলাতুল কদর’ একটি যৌগিক শব্দ। ‘লাইলাতুন’ মানে রাত।

‘কদর’ মানে মর্যাদা, মহিমাময়, মূল্যবান, সম্মান। আর ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ হল- মহিমাময় রজনী, সম্মানের রজনী, মর্যাদাপূর্ণ রাত। এ রাত কে ‘শবে কদর’ বলা হয়ে থাকে।

পবিত্রতম এ রজনী বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ববাসিকে অবগতি দিয়েছেন। কুরআনুল কারীমে এসেছে- “আমি একে (কুরআন) নাযিল করেছি শবে-কদরে। শবে-কদর বিষয়ে আপনি কি জানেন?।

শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয়। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে” (সূরা কদর)।

পবিত্র মাহে রমাদ্বানে কোন রাত্রিতে ‘লাইলাতুল কদর’ তা নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ করো” (বুখারী)। তবে রমজানের ২৭ তম রজনী লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।

প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তা হল রমজানের ২৭ তম রাত” (মুসলিম)।

অন্যদিকে হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭ তম রজনীতে অনুসন্ধান করে” (আহমাদ)।

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম আ‘যম আবু হানিফা নোমান বিন সাবেত রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সহ প্রাজ্ঞ ইসলামিক স্কলারগণ বলেন, সূরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় ৩বার এসছে, আর ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটি আরবিতে লিখতে ৯টি অক্ষর ব্যবহার হয়। তাই ৩*৯=২৭, তথা ‘লাইলাতুল কদর’ রমজানের ২৭ তম রমজান (২৬তম রমজান দিবাগত রাত্রি)।

তবে সকলেই ঐক্যমত যে, রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রজনীগুলোতে ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ করতে হবে ও এ উদ্দেশ্যে বিশেষ ইবাদত করতে হবে (তাফসীরে মাযহারী, আনওয়ারুল মিশকাত)।

এ মহামান্বিত ‘লাইলাতুল কদর’ এর পরিপূর্ণ নেয়ামত আমাদের অর্জন করতে হবে। কোনো ক্রমেই এ রজনী তে হেলায়-খেলায় আর খোশগল্পে কাটানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের জন্য আত্মমূল্যায়নসহ লাইলাতুল কদরে জাগ্রত হয়ে ইবাদত করবে, তার পূর্বেকারসব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে” (বুখারী)। এ রাত্রিতে বেশি বেশি নফল নামায, ইস্তিগফার, সালাতুস তাসবিহ, সালাতুল হাজত, জিকির-আজকার, কুরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, কবর জিয়ারত ও দান-সদকা গুরুত্বপূণ আমল। হাদিসে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থাকাকে সুন্নাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি দয়া করে বলে দিন, লাইলাতুল কদরে কোন দোয়াটি পাঠ করবো?

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি” অর্থাৎ “হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালো বাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন” (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)।

আসুন, এ রাতে বিগত জীবনের সকল গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করি। ‘লাইলাতুল কদর’ এর মত গুরুত্বপূর্ণ রাত্রিতে আল্লাহ ইবাদতে মশগুল থাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। এ একরাত ইবাদত করা মানে অন্য প্রায় ৮২ বছর ইবাদতের সমান, সুবহান আল্লাহ।

পবিত্র কুরআন কে পাঠ করা ও বুঝার জন্য সময় ব্যয় করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত গ্রহণ করার প্রশাপাশি কুরআনময় জীবন গড়ার প্রত্যয় করি। আল্লাহ আমাদের ফরিয়াদকে কবুল করুন, আমিন।

FacebookTwitter