অনলাইনঃ
বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেকারত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারত্ব বাড়ছে। ডিজিটাল অর্থনীতি বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করে।
প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এর মাধ্যমে উন্নয়নের গতি আরও বাড়ানো সম্ভব। গতকাল ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্স (ডিএসসিই) আয়োজিত ‘ডিজিটাল ইকোনমি ফোর্থ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন অ্যান্ড বিগ ডাটা :ইমপ্যাক্ট অন বাংলাদেশ ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএসসিই গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসসিই’র উদ্যোক্তা অর্থনীতি কোর্সের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিল রেভুলেশনের সহসভাপতি সৈয়দ তামজিদ উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম, ডিএসসিই সহকারী অধ্যাপক রেহেনা পারভীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, প্রযুক্তি এগিয়ে চলছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় অর্থনীতির উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নের পাশাপাশি এর চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রাখতে হবে। সাইবার আক্রমনের মাধ্যমে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। আবার প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে বেকারত্ব বাড়তে পারে।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সঠিক নীতি সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ১ শতাংশ মানুষের হাতে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ রয়েছে। এই বৈষম্য দারিদ্র কমাতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির কারণে যেন কেউ কাজ হারিয়ে বেকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মানুষের উন্নয়নকে সামনে রেখে যেকোন উন্নয়ন নীতি গ্রহনের পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী বলেন, প্রযুক্তির উপর ভর করে আরেকটি শিল্পবিপ্লব হতে চলেছে। এর থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে রুপরেখা অনুসারে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে ডিজিটাল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, আয় বাড়াতে হবে, দরিদ্র ও বৈষম্য কমাতে হবে। এর যুগোপযোগী উপায় হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতি।
তিনি বলেন, অর্থনীতির সঙ্গে ডাটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশাল ডাটাভান্ডার যেকোন সিদ্ধান্ত অনেক দ্রুত ও নির্ভূলভাবে নিতে সহায়তা করে। অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ডিজিটল অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ডাটার নিরাপত্তা। সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হতে হবে। নারীরা ডিজিটাল ইকোনমিতে কম সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর কাঠামো তৈরির বিকল্প নেই। এতে মানুষের সক্ষমতা বাড়ে ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
অধ্যাপক হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, দেশের প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। একসময় রেমিটেন্স আসতে অনেক সময় লাগতো এবং তা অপব্যবহারের সুযোগ ছিল। ব্যাংকগুলোর রেমিটেন্স আনার প্রক্রিয়া ডিজিটাল করার কারণে এটি বন্ধ হয়েছে। সরকার বড় ধরনের ডাটাবেজ ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছেন। এগুলোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম পারভেজ বলেন, চতুর্থ অর্থনৈতিক বিপ্লব প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে ৪জি চালু করে ৫জি চালুর প্রক্রিয়াও চলছে। বাংলাদেশের অনেক ক্যাপাসিটি আছে, সেগুলোর ব্যবহার করে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে আবার তা হারিয়েও যাচ্ছে। আমাদের কি আছে তার সঠিক তথ্য নেই। উন্নয়নের আগে কি ধরনের সুযোগ রয়েছে তার তথ্য আগে সংগ্রহ করতে হবে। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কাজের সুযোগ কম হওয়ায় আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়ছে। এসবের জন্য ডিজিটাল অর্থনীতির ধারা গড়ে তুলতে হবে। এটির জন্য সামাজিক সচেতনতা, গবেষণার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
তামজিদ উর রহমান বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য সরকারের পলিসি নেই। প্রযুক্তিনির্ভর সেবাগুলোকে কিভাবে পরিচালিত হবে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেই নীতি প্রণয়ন করা জরুরী। চ্যালেঞ্জ থাকলেও ডিজিটাল অর্থনীতিকে গ্রহণ করে প্রতিযোগী সক্ষম হয়ে উঠতে হবে।
-এসএম