আইন আদালতঃ
ফেনীর নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার তদন্ত যেন কুমিল্লার তনুর মতো না হয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। রাফির মৃত্যুর খবর পত্রিকায় দেখে তা বৃহস্পতিবার আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।
এতে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, যেহেতু বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো আদেশ দিতে চাই না। আমরা শুধু বলব রাফির ঘটনা তনু বা অন্যদের মতো যেন হারিয়ে না যায়। ঘটনার বিষয়ে তদন্তকাজে যেন কোনো গাফিলতি না থাকে। তদন্তে গাফিলতি দেখলে আপনারা আদালতে আসবেন, তখন আমরা ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করব।
এর আগে ব্যারিস্টার সুমন আদালতকে বলেন, রাফির মারা যাওয়ার ঘটনাটি মর্মান্তিক ও সেনসেটিভ। নুসরাত মারা যাওয়ায় সারাদেশের মানুষ ব্যথিত। এ ঘটনার সঙ্গে মাদরাসার অধ্যক্ষ, স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাই পুলিশের শুধু একজন এসআই দিয়ে এ ঘটনার তদন্ত করলে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা দেয়ার আবেদন জানাচ্ছি। অগ্নিদগ্ধ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের মৃত্যুতে আমরাও ব্যথিত। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, কুমিল্লার তনু বা চট্টগ্রামের মিতুর মামলার মতো যেন রাফির মামলাটিও হারিয়ে না যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল (বুধবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুসরাত।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে তার কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন- এমন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন রাফির মা শিরিন আক্তার। ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসাছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকাপরা ৪-৫ জন তাকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।
অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।