অনলাইনঃ
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ঢাকা সহ সারাদেশের মানুষের এক আনন্দ দানের কেন্দ্রস্থল। এই মেলায় বিনোদনের তেমন কোন মাধ্যম না থাকলেও সারা বছরের শখের অনেক কিছুই কিনে ফেলেন ক্রেতারা।
এখানে দেশি বিদেশী বিভিন্ন ব্যবসায়ীর স্টল থেকে নানান প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়াও যায়। ৩১.৫৩ একর জমির উপর বিশাল এই মেলায় কিনাকাটা করতে বেশিরভাগ মানুষই পরিবার নিয়ে আসেন, কিংবা গ্রুপে। বিশাল এই মেলা চত্তর কেনা কাটা করতে বা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে হাঁপিয়ে গেলে একটুখানি জিরানোর পর ভাল খাবারের রেওয়াজ আছে এখানে। আর এরই সুযোগ নিয়ে এই মেলায় ঢাকার নামকরা কিছু দোকানের নামে বসিয়েছে খারারের দোকান। খাবারের এই দোকানগুলো মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাজীর বিরিয়ানি।
বাণিজ্যমেলার ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের বামে একটু এগুলো হাজীর বিরিয়ানির ৫টি স্টল দেখা যাবে। এ ছাড়াও স্পাইস ওয়াল্ড, জিঙ্গিস খান এর মত বিশাল আকারের বিরিয়ানির দোকানে বৃহৎ আকারে ব্যানার লাগিয়ে এতিহ্যবাহি হাজীর বিরিয়ানি বিক্রি করছে। বাস্তবে তাদের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী হাজীর বিরিয়ানির কোনো সম্পর্ক নেই।
এরপরও তারা পুরান ঢাকার এতিহ্যবাহি হাজীর বিরিয়ানি বলে ভোক্তার কাছে দেদারচ্ছে বিরিয়ানি বিক্রি করছেন।
এরপরও যেনো দেখার কেউ নেই। নামে বেশ কয়েকটি স্টল বসলেও সেগুলোর সবটাই ভূয়া নামে। তাদের সঙ্গে প্রকৃত হাজীর বিরিয়ানির কোনো সম্পর্ক নেই।
মেলার স্টলগুলোতেও ক্রেতারা নকল বিরিয়ানির দোকানের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব নকল হাজীর বিরিয়ানি খেয়ে বিরিয়ানির মান ও স্বাদ আগের মতো নেই বলে ধারণা করছেন অনেকেই। গত ১৮ জানুয়ারি ক্রেতার কাছে মূল্য বেশি অভিযোগ আসে ভোক্তা অধিদফতরে। পরে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় তারা।
হাজীর বিরিয়ানির মতিঝিল শাখার পরিচালক হাজী মো. জুয়েল টেলিফোনে বাংলাডেইলি২৪.কমকে বলেন, আমাদের তিনটি শাখায় তাদের রান্নার মান ও স্বাদ একই বজায় থাকে। কিন্তু নকল হাজীর বিরিয়ানির জন্য তাদের নাম ও সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাণিজ্যমেলার স্টলগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ক্রেতারা নকল বিরিয়ানির দোকানের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মেলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
অপর এক হাজীর বিরিয়ানি স্টলের পরিচালক আবদুল কাদির বলেন, হজ করলেই হাজি হয়। এই হাজি মেলার হাজি। মেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্টলও শেষ হবে।
পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি বলে কেনো বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্মচারীরা জানে না তাই বলে। তবে আমাদের বিরিয়ানির মানও খারাপ না।
মূলত অনুসন্ধানে জানা গেছে এই হাজীর বিরিয়ানি বিক্রেতার মূল হোতা রাজু বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন নামে স্টল বরাদ্দ নিয়ে বাঁকিতে মালামাল কিনে এই সবখাবারের দোকান চালান। দোকান চলে নিজ গতিতে।
কর্মচারি মাধ্যমে। আর রাজু লুকিয়ে থকেন গোপন আস্তানায়। সিসি টিভির নিয়ন্ত্রন কক্ষে বসে পাওনাদারদের গতিবিধি লক্ষ করেন। তার খোজ নিতে গেলে দোকানের ম্যানেজার নির্দেশ মত বলে দেন রাজুর অবস্থান। নির্দেশ মত ওই দোকানে গেলে আবা সেখানেও নির্দেশ দেওয়া থাকে। সেই নির্দেশ মত অপর দোকানে গেলে আবার তাকে অন্য কোন ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন তারা।
এভাবে পাওনাদারেরা মাল সরবরাহ দিয়ে দিনের পর দিন হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। মোবাইলে ফোন করলে মেসেজ অপশনে লেখা উঠে please text me. মেলা শেষের আগেই রাজু হাওয়া হয়ে যান।
এ ছাড়াও রাজু মেলার বিভিন্ন স্টল বরাদ্দের ব্যবসায় করেন। স্টল দখল করে প্রকৃত ক্রেতার কাছে চড়া দামে বিক্রি করেন। ফরেন প্যাভিলিয়নে ৮ *৮ ক্ষুদ্র পরিসরের একটি স্টলের দাম প্রায় ৫ গুন বেশি দামে বিক্রি করেন রাজু। যার ফলে প্রকৃত ক্রেতারা সরাসরি স্টল কিনতে না পারায় পন্যের মূল্য বেশি নির্ধারণ করেন। এতে করে বিদেশি ব্যবসায়ীদের এ দেশে ব্যবসা করার প্রবনতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া জোর করেও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে রাজুর বিরুদ্ধে।
যখনেই কোন সমস্যায় পড়েন তখনই মেলার গেইট ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মীর ব্রদার্সের স্বত্বাধিকারী মীর শহীদুল আলমের নাম অনুসরণ করেন।
এ ব্যাপারে মীর শহীদুল আলম রাজুর সঙ্গে সম্পৃক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রকৃতপক্ষে মীর ব্রাদার্স দীর্ঘ দিন যাবৎ বিশ্বস্ততার সহিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার গেইট ইজারা পরিচালনা করছেন।