”অলিম্পিক ইয়ুথ” শীর্ষ সম্মেলনে যা বললেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

অনলাইনঃ

নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১-৪ ডিসেম্বর ২০১৮ জাপান সফর করেন যেখানে তিনি টোকিও ২০২০ অলিম্পিক-এর বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক সভায় এবং “ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) ইয়ুথ সামিট”-এ যোগদেন।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক ২ ডিসেম্বর আয়োজিত এই সামিটে ৪০টি দেশের ৪২জন তরুণ প্রতিনিধি অংশ নেয়। অলিম্পিক কমিটির তরুণ নেতৃত্ব কর্মসূচির (“ইয়ং চেঞ্জ মের্কাস+” কর্মসূচি) একটি অংশ হিসেবে আয়োজিত হয় এই সামিট। অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন আন্তর্জাতিকঅলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাক বাখ এবং প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর বক্তব্যে প্রফেসরইউনূস সামাজিক ব্যবসা কীভাবে অ্যাথলেটদের ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে এবং সমাজ ও কমিউনিটিরনেতা হিসেবে কীভাবে তাদেরকে রূপান্তরিত করতে পারে তা ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, “তোমরা শুধু একটি বিষয় অর্থাৎ খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী জুড়ে মানুষকে সংগঠিত করতে পারো। তোমরা পরিবর্তনের অগ্রদূত, অগ্রপথিক। তোমরা তোমাদের এলাকা, তোমাদের সমাজ ও গোটা বিশ্বকে বদলে দিতে পারো।” তাঁর ভাষণের পরেই “ইউনূস স্পোর্টস হাব”-এর আয়োজনে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত যেখানে তরুণদের দ্বারা পরিচালিত দান-নির্ভর সামাজিক প্রকল্পগুলোকে কীভাবে সামাজিক ব্যবসায়ে রূপান্তরিত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।

সামিট শুরু হবার পর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাক বাখ ও প্রফেসর ইউনূস এক বৈঠকে মিলিত হন যেখানে তাঁরা আগামী বছরগুলোর জন্য ইউনূস স্পোর্টস হাবের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট বাখ জুলাই ২০২০-এ অনুষ্ঠেয় টোকিও ২০২০ অলিম্পিকে যোগ দিতে প্রফেসর ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান। প্রফেসর ইউনূস ইয়ং চেঞ্জ মের্কাস কর্মসূচির মাধ্যমে কীভাবে তরুণদের ক্ষমতাকে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা এবং প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিক, যেখানে “সলিদেও” নামের একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্ল্যাটফরমকে প্রফেসর ইউনূস দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, তার প্রস্তুতিগুলো অলিম্পিক প্রেসিডেন্টের নিকট তুলে ধরেন। উল্লেখ্য যে, ইউনূস সেন্টার প্যারিস এবং ল্য ক্যানঅ অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনে প্যারিস ২০২৪-এর সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

সভার শেষে প্রেসিডেন্ট বাখ প্রফেসর ইউনূসকে জাপানী অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট সুনেকাজু তাকেদা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াসুয়ো সাইতোর সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রফেসর ইউনূস তাঁদের নিকট সামাজিক ব্যবসা কীভাবে সমাজে স্থায়ী ও ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে তা ব্যাখ্যা করেন। এরপর তাঁরা চারজন টোকিও ২০২০ অলিম্পিক, ইউনূস স্পোর্টস হাব এবং জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ইউনূস শিকি সেন্টারের মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাব্য বিভিন্ন ক্ষেত্র ও উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রফেসর মাসাহারু ওকাদা এবং প্রফেসর আশির আহমেদ কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনূস সেন্টারের প্রতিনিধিত্ব করেন।

ডিসেম্বর ৩, ২০১৮ প্রফেসর ইউনূস টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের প্রধান নির্বাহী তোশিরো মুতোর সাথে সংস্থাটির সদর দপ্তরে বৈঠক করেন। জনাব মুতো ও তাঁর সহযোগীরা টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং পরবর্তী বিভিন্ন সাসটেইন্যাবিলিটি কর্মসূচি প্রফেসর ইউনূসের নিকট তুলে ধরেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন যে, ২০২০ অলিম্পিকের মধ্য দিয়ে জাপান কীভবে তার বিপুল সৃষ্টিশীল ক্ষমতাকে সমাজ পরিবর্তনের কাজে ব্যবহার করতে যাচ্ছে সে বিষয়ে তিনি শিক্ষা নিতে এসেছেন। তিনি জনাব মুতোকে প্যারিস সফর করতে এবং প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা কর্মসূচি প্রণয়নে প্যারিস টিমকে সহায়তা করতে আমন্ত্রণ জানান। উল্লেখ্য যে, অলিম্পিকের ইতিহাসে প্যারিস ২০২৪ সবচেয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক গেমসের আয়োজন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি টোকিও অলিম্পিক যেসকল সাসটেইন্যাবিলিটি কর্মসূচি গড়ে তুলছে তা থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন যে, জাপানের তরুণদের অংশগ্রহণে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে এই কর্মসূচিগুলো ২০২০ সালের পরেও চালিয়ে যেতে এবং এগুলোকে সম্প্রসারিত করতে জাপানে অবস্থিত ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারগুলো টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের সাথে কাজ করে যাবে।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, জাপানেরবিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারগুলো সমাজ পরিবর্তনে তরুণদেরসংগঠিত করতে মূল ভূমিকা পালন করে যাবে। তিনি প্রস্তাব করেন যে, এই সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্রগুলোরএখন থেকে টোকিও ২০২০ এর সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করা প্রয়োজন। সভায় এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয়যে, এ বিষয়ে একটি সহযোগিতা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে দু’পক্ষেরমধ্যে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণী সভার আয়োজন করা হবে।

-এসএম

FacebookTwitter