ডেস্ক রিপোর্টঃ
পাওয়ারিং স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করেছে জিই।
মঙ্গলবার ( ৯ ২৩) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত ইনডিপেন্ডেন্ট এনার্জী কোম্পানি জিই ভার্নোভা-এর উদ্ভাবনী সক্ষমতা তুলে ধরা হয়, যা দেশে টেকসই, সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করবে।
সেমিনারের মূল থিম ‘লিডিং অ্যা নিউ এরা অব ক্লীন এনার্জী’ জিই’র অত্যাধুনিক গ্যাস টারবাইন প্রযুক্তি ব্যবহার প্রসঙ্গে আলোপাত করে, যা হাইড্রোজেন ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মিশ্রন ব্যবহারে, দেশে জ্বালানি সরবরাহে ভূমিকা পালনে এবং কার্বন-শূণ্য করতে সক্ষম।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপি জিই’র ১২০ টিরও বেশি গ্যাস টারবাইন রয়েছে, যা ৫ শতাংশ (ভলিউম অনুসারে) ও ১০০ শতাংশ হাইড্রোজেন দ্বারা চালিত এবং এ পর্যন্ত ৮.৫ মিলিয়নেরও বেশি অপারেটিং আওয়ার রেকর্ড হয়েছে৷
বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে ভূমিকা পালনের অংশ হিসেবে, জিই ২০২২ সালে একটি উদ্দেশ্য-নির্মিত ব্যবসা ‘জিই ভার্নোভা’ শুরুর ঘোষণা দেয়। এটি টেকসইতা নিশ্চিতের জিই’র প্রতিশ্রুতিকে পুঁজি করে জলবায়ু-বান্ধব জ্বালানি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ সচিব মো: হাবিবুর রহমান বলেন, “আমরা নীতিগত হস্তক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, যা বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করতে সক্ষম এবং ভবিষ্যতে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা কার্যকরভাবে মিটিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
আমরা এমন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, যা ইতোমধ্যেই পরীক্ষিত এবং দ্রুত কার্বণের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে হাইড্রোজেনের ব্যবহার নিশ্চিতে জিই’র মতো অভিজ্ঞ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের টেকসই উন্নয়নে আমাদের সহযোগিতা করতে পারবে।”
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই শতভাগ বিদ্যুৎ কভারেজ নিশ্চিত করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।
বিদ্যুৎ পরিকাঠামোকে আরও মজবুত করতে আমরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সল্যুশনস ব্যবহার করছি এবং জিই ভার্নোভা এই যাত্রা এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
জিই বহু বছর ধরে আমাদের সাথে অংশীদারিত্ব করে আসছে এবং বাংলাদেশে এনার্জী ভ্যালু চেইনের উন্নয়নে একাধিক ক্ষেত্রে তারা পরিষেবা প্রদান করে চলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে জিই ভার্নোভা আমাদের সাহায্য করবে বলে আমি আশাবাদী।”
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি অবহেলার কোন সুযোগ নেই, এবং বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মানদণ্ড গঠনে টেকসই পন্থা অবলম্বন করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনারে আলোকপাত করা হয়।
সেমিনারে জিই গ্যাস পাওয়ার সাউথ এশিয়া’র সিইও দীপেশ নন্দ বলেন, “বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির এই নতুন যুগের সূচনায় জিই সর্বদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
জিই’র প্রযুক্তি বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রয়োজন মতো জ্বালানি সহায়তা নিশ্চিতের পাশাপাশি একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানির যোগান দিচ্ছে।
জ্বালানী সমস্যা সমাধানে জিই কার্যকরী, উৎপাদনশীল এবং গুণগত বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামীতে দেশের বিভিন্ন উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পে আমরা এইচএ প্রযুক্তির ব্যবহার অব্যাহত রাখবো, যা হাইড্রোজেনকে ঘনীভূত করে প্রকল্পগুলোয় অধিক পরিমাণে জ্বালানির যোগান দিতে সক্ষম।
অন্যদিকে, গ্রিডের ভারসাম্য এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে আমরা হেভি-ডিউটি ও অ্যারোডেরিভেটিভ গ্যাস টারবাইনের ব্যবহার নিশ্চিত করছি।
এটি অত্যাধুনিক পাওয়ারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের বিদ্যুৎ খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন শক্তির উৎস ব্যবহার করে একটি যুগোপযোগী ইকোসিস্টেম তৈরিতে জিই’র হাইব্রিড পাওয়ার সল্যুশনগুলো বিশেষ ভুমিকা পালন করবে আমার বিশ্বাস।”
সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেল-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন; জিই গ্যাস পাওয়ার-এর লো-কার্বন ফুয়েলস বিভাগের ইমারজেন্ট টেকনোলজি ডিরেক্টর জেফরি গোল্ডমেয়ার; জিই গ্যাস পাওয়ার সাউথ এশিয়া’র সিইও দীপেশ নন্দ প্রমুখ।
বক্তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যকারিতা, জ্বালানি গতিশীলতা, গ্রিড লেভেলে নবায়নযোগ্য শক্তির ভারসাম্য, দেশে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আনতে নীতিমালা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের মতামত শেয়ার করেন।
বর্তমানে জিই’র পোর্টফোলিও-তে এইচ-ক্লাস, ই-ক্লাস, এফ-ক্লাস, ফ্রেম ৬, এবং অ্যারো-ডেরিভেটিভসহ গ্যাস টারবাইন প্রযুক্তিসমূহ রয়েছে, যা দেশব্যাপি স্থাপিত বা চলমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই পোর্টফোলিওতে ৪০টি গ্যাস টারবাইন সমৃদ্ধ একটি ইনস্টলড বেইজ রয়েছে, যা বাংলাদেশের ৩৬ লক্ষেরও বেশি বাড়ির জন্য প্রায় ৩ গিগাওয়াট নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম।
বাংলাদেশে জিই’র বিভিন্ন প্রকল্পে ২ হাজারের বেশি কর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছে, যার অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত।
-শিশির