ডেস্ক রিপোর্টঃ
পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশিষ্টজনেরা বিভিন্ন ভাবে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতার দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, দেশে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। উৎপাদনের পর বাজারে চাহিদা না থাকলে লোকসান দিয়ে হলেও তা বিক্রি করে দিতে হয়। এমন অবস্থায় শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ পোলট্রি কনভেনশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্টরা। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পোলট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি)।
অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘ড্রেসড ব্রয়লার (চামড়া ছাড়া) নিয়ে এখন থেকেই কাজ করা উচিত। কিন্তু নীতি–নৈতিকতা না মানলে ড্রেসড ব্রয়লার আস্থা হারাবে। আবার কখনো কখনো দেখা যায়, একটি ডিমের চেয়েও কম দাম একটি বাচ্চার। চাহিদার সঙ্গে যদি উৎপাদন করা হয়, তাহলে এমনটা হওয়ার কথা নয়। সবার সহযোগিতায় একটা সিলিং (নির্দিষ্ট পরিমাণ) করে দিতে চাই যে বছরে এই পরিমাণ উৎপাদন করা যাবে।’
এ ছাড়াও বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (প্রান্তিক ডিলার খামারী সংগঠক) সভাপতি সুমন হাওলাদার তার লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জানান, ডিম ও মুরগীর বাজার নিয়ে সঠিক রিপোর্ট করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। বর্তমানে প্রান্তিক খামারীদের একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১১ টাকা। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগীর উৎপাদন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। কিন্তু প্রান্তিক খামারীগণ এতদিন ১ কেজি ব্রয়লার মুরগী বিক্রি করতে পারছেন ১২০ টাকা আর একটি ডিম বিক্রি করছেন ৮ টাকা ফলে লস হচ্ছে ৩ টাকা। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগীতে লস হচ্ছে ৩০ টাকা। তাই বর্তমানে আপনারা যে বাজারমূল্য দেখছেন এখনো খামারীরা লসের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এখন দাম বাড়ার কারণ প্রান্তিক খামারীগণ লসের সম্মুখীন হয়ে খামার বন্ধ করে দেন এবং ডিমের খামারীগণ ডিমের মুরগী বিক্রি করে দেন ও বাজারে চাহিদা বাড়ার কারণে এখন একটু দাম বাড়তি। তাও ন্যায্যমূল্য নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদনকে ধরে রাখতে হবে। প্রান্তিক খামারীদের ন্যায্য মূল্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ন্যায্য মূল্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশে ডিম ও মুরগীর সংকট দেখা দিবে এবং কর্পোরেট কোম্পানীর কাছ থেকে তখন পর্যাপ্ত পরিমানে দাম দিয়ে খেতে হবে ফলে ভোক্তাও জিম্মি হয়ে পড়বে তাদের কাছে।
কর্পোরেট কোম্পানীদের স্বেচ্ছাচারীতায় তারা পোল্ট্রি ফিড, মুরগীর বাচ্চা ১০০% উৎপাদন করেন আবার ডিম ও মুরগীও তারা উৎপাদন করেন। ভোক্তা ও খামারীদের জিম্মি করে বাজার সি-িকেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। প্রান্তিক খামারীগণ কর্পোরেটদের কাছে অসহায়। যার কারণে প্রান্তিক খামারী কর্পোরেটদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পোল্ট্রি খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন।
প্রান্তিক খামারী ঝরে যাওয়ার কারণ মুরগীর খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ১৮০০ টাকার লেয়ার খাদ্য ৩০০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং ব্রয়লার খাদ্য ২২০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাই উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বাড়ার ফলে প্রান্তিক খামারীগণ ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বাধ্য হচ্ছে খামার বন্ধ করে দিতে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে খামারীদের দুঃখ-কষ্টের কথা জানানো হলেও তারা আশ^াস দিয়ে রেখেছেন কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই বিধায় অনেক খামারী তাদের খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হলে কর্পোরেট কোম্পানীদের ডিম ও মুরগী উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদনকে ধরে রাখতে হবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি অতি জরুরী ভিত্তিতে প্রান্তিক খামারীদের টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণন করুন অন্যথায় দেশে ডিম ও মুরগীর বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এবং কর্পোরেটদের কাছে ডিম ও মুরগীর বাজার জিম্মি হয়ে পড়বে।
-শিশির