নিশাদ রত্নাঃ

আমি কুসুম। গোলাপ ফুলের পাঁপড়ীর মত গায়ের রং নিয়ে জন্মেছিলাম বলে মা- বাবা নাম রেখেছিল কুসুম।

কুসুমের মত সংসারে সুবাস ছড়াতে ছড়াতে বড় হয়ে উঠছিলাম। সবেমাত্র নবম শ্রেণিতে উঠেছি, এমন সময় বাবা আমাকে প্রাইভেট দিল তার এক ছাত্রের কাছে।

ছেলেটি বিএসসিতে পড়ে। খুব ভালো ছাত্র। হিন্দু। নাম শ্যামল। শ্যামল খুব শান্ত, সুন্দর, মেধাবী আর ভদ্র ছেলে।
কিন্তু বিধিবাম!

লোকে বলে, পিরিতি নাকি জাত,কাল, পাত্র, ধর্ম কিছুই মানেনা। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। দুজন দুজনের প্রেমে পড়লাম। প্রেম গভীর থেকে গভীরতর হতে শুরু করল। দুজন দুজনকে চোখে হারাতে শুরু করলাম। কিন্তু আমাদের মিলনতো পরিবার,সমাজ কেউই মেনে নিবেনা। অগত্যা দুজন পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

এদেশে শুধু শ্যামলের পরিবারই থাকে, তাছাড়া ওর চৌদ্দ গোষ্ঠী ভারতে। সিদ্ধান্ত হলো দুজন মিলে ভারতে পালিয়ে যাব। কোনো মতে শুধু সীমান্ত পার হতে পারলেই হয়। সীমান্ত এলাকায় শ্যামলের এক বন্ধু থাকে। সে দুইদেশের মাল পারাপারের ব্যবসা করে। সীমান্তে ভালো খাতির আছে। ওর সাথে কথা বলে আমি আর শ্যামল একরাতে পালিয়ে গেলাম। অনেক কষ্টে শ্যামলের বন্ধু পবিত্রর বাড়িতে গিয়ে উঠলাম।

আমরা সেখানে স্বামী -স্ত্রী পরিচয়েই থাকতে শুরু করলাম। নাম পূজা। হাতে শাখা,মাথায় সিঁদুর। সপ্তাহ খানেক থাকার পরে আমাদের সীমান্ত পার হবার ব্যবস্থা হয়ে গেলো। আজ ভোর রাতে আমরা সীমান্ত পার হবো।

সন্ধ্যায় শ্যামল তার বন্ধু পবিত্রকে নিয়ে সব ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা খোঁজ নিতে গেলো আর আমাকে সবকিছু গুছিয়ে নিতে বলে গেলো।

একদিকে শ্যামলকে নিয়ে সুখে ঘর বাঁধার স্বপ্ন অন্যদিকে মা- বাবা আর প্রিয় দেশকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট, এই দুইয়ের অনুভূতিতে আমার বুকের ভীতরটা কেমন জানি কেঁদে -কেঁপে উঠছিল।

এমন সময় বাড়ির দরজার কড়া নাড়া দিল কেউ। বাসায় কেউ না থাকায় আমিই গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। ওমা সেকি! এযে পুলিশ! তিনজন পুলিশ হুড়মুড় করে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ল। আমাকে জিজ্ঞাসা করল,
” তোমার নাম কি?”
আমি বল্লাম,
” পূজা “

একটা পুলিশ সাথে সাথে আমাকে ধমক দিয়ে বলল,
” চুপ! শয়তানী, তোর নাম কুসুম।”
এবার ওরা পকেট থেকে একটা ছবি বের করে আমার মুখের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলল,
” তোর নাগর কোথায়?”
আমি বল্লাম,
” জানিনা”
আরেকজন পুলিশ বলল, ” একে নিয়ে চল, ওকেও ঠিকঠাক ধরে ফেলব। আমাদের চোখ এড়িয়ে পালাবে কোথায়।”
বাবা- মায়ের আদুরে সন্তান আমি। মফস্বলে বাস করি পুলিশের নাম শুনলেও দূর থেকেই স্বচক্ষে দু একবার পুলিশ দেখেছি, আর দেখেছি টেলিভিশনে। পুলিশ নামটা শুনলে ছোট বেলা থেকেই বুক কাঁপে। থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে ওরা নাকি চোর বদমাশদের খুব মারে। তবে আমি মনে মনে নিজেকে স্বান্তনা দিই, আমিতো আর চোর বদমাশ নয় যে আমাকে পুলিশ মারবে।

একজন পুলিশ গাড়ির ড্রাইভার, বাঁকি দুজন আমাকে নিয়ে গাড়ির ভীতরে গিয়ে বসল। রাতের অন্ধকার ভেদ করে হুইসেল দিতে দিতে গাড়ি ছুটে চলল। হঠাৎ ব্রেক কষে গাড়িটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি সজোরে ধাক্কা খেলাম সামনের সীটের সাথে। সাথে সাথে একটা পুলিশ আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
” ব্যাথা পেয়েছো খুকি?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
” হ্যাঁ।”
এবার পুলিশটি বলল,
” এসো, আদর করে দিই।”
সাথে সাথে তিনজনই হো হো করে হেসে উঠলো।
এরপর আমার সাথে যা ঘটল তা বর্ণনাতীত।
পালাক্রমে তিনজনই আমার মুখ বেঁধে গাড়ির ভিতরেই ধর্ষণ করল।
আমার চাপা গোঙানিতে রাতের অন্ধকার আরও ভৌতিক হয়ে উঠলো।
চলবে,,,,

( এটি একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। প্রতিটি পেশার প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল। মানবিক এবং অমানবিক লোক সমাজের প্রতিটি স্তরেই আছে। আর তাইতো মানুষ গড়ার কারিগর পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছেও ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী। আমিও একজন শিক্ষক। কাউকে ছোট করা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়।)

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily