অর্থনীতিঃ
ব্রাজিলীয় তুলার জন্য ব্রাজিলিয়ান কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অ্যাবরাপা-এর আন্তর্জাতিক বাজার উন্নয়ন কার্যক্রম কটন ব্রাজিল, বাংলাদেশে আজ তাদের সেলার্স মিশন কার্যক্রম আয়োজন করেছে।
টেকসইয়তা তুলে ধরার মাধ্যমে ব্রাজিলকে উচ্চমানের ও ট্রেসযোগ্য তুলার নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই মূলত এই আয়োজন।
আয়োজনে ব্রাজিলীয় তুলার রপ্তানি বিকাশের মাধ্যমে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতার বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে বৈশ্বিক রপ্তানিকারকদের তুলা উৎপাদন হার হ্রাসের কারণে বিশ্ব বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এশিয়ার তৈরি পোশাক শিল্পে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এশিয়ার বেশ কিছু দেশের স্থানীয় বাজারের ঘাটতি পূরণে আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্রাজিলের তুলার চাহিদাও বেড়েছে, যার ফলস্বরূপ ব্রাজিল এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ তুলা উৎপাদনকারী এবং দ্বিতীয় বৃহৎ তুলা রপ্তানিকারক দেশ।
ব্রাজিল ৯০ শতাধিক ফার্মে অত্যাধুনিক কাটিং-এজ কৃষি প্রযুক্তি ও অ-সেচ চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০১৯/২০২০ সালে প্রায় ৩ মিলিয়ন টন তুলাশস্য চাষের মাধ্যমে তুলার উৎপাদন বাড়িয়েছে, ২০১৫/২০১৬ সালে যা ছিল ১.৩ মিলিয়ন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্রাজিল বাংলাদেশে ১৬৬ টন তুলা সরবরাহ করা হয়েছে।
অ্যাবরাপা ধারণা করছে, এই বছর ব্রাজিলে ১.৫৮ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তুলাশস্য চাষ হবে, যা ২০২১ সালের উৎপাদন ভূমির চেয়ে ১৫% বেশি।
বর্ধিত এই ভূমি থেকে ২০২২ মৌসুমে ২০% উৎপাদন আশা করছে অ্যাবরাপা, যার পরিমাণ হবে ২.৮২ মিলিয়ন। ব্রাজিলীয় তুলার ইতিহাসে এটিই হতে পারে দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ উৎপাদন মৌসুম।
২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্রাজিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১.৫১৯ মিলিয়ন টন তুলা পাঠিয়েছে, যা থেকে দেশটি আয় করেছে ২,৮২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পরবর্তী শিপমেন্টের পরিমাণ ১.৯০ মিলিয়ন হতে পারে বলে আশা করছে দেশটি।
তুলা রপ্তানিতে টেকসই উৎস হওয়ার পাশাপাশি দেশটির তুলা এবিআর কার্যক্রম রেসপন্সিবল ব্রাজিলিয়ান কটন কর্তৃক স্বীকৃত এবং বিশ্বব্যাপী টেকসই চাষাবাদের অনুশীলন ও তুলা উৎপাদনের প্রচার করা অলাভজনক গ্রুপ বেটার কটন ইনিশিয়েটিভ (বিসি আই)-এর লাইসেন্স প্রাপ্ত।
এই শিল্পের সাপ্লাই চেইনে মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ব্রাজিলের তুলা অ্যাবরাপা’র তুলার মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম স্ট্যান্ডার্ড ব্রাজিল এইচভিআই কর্তৃক পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে, যেখানে তুলার পার্টনারিং থেকে শুরু করে ল্যাব ক্লাসিং পর্যন্ত যাচাই করা হয়ে থাকে এবং ৯৭% পর্যন্ত নির্ভরতা নিশ্চিত করতে পারে।
বস্তাবন্ধি তুলা চিহ্নিত করতে অ্যাবরাপা আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এসএআই) তৈরি করেছে, যেখানে বস্তায় থাকা ট্যাগের উপর কিউআর কোড প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে।
এটি ফসল কাটা থেকে সরবরাহ পর্যন্ত তুলার গুণমান, উৎপত্তি, এইচভিআই ক্লাসিং এবং সামাজিক-পরিবেশগত শিল্প সনদপত্র বা সার্টিফিকেট ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ করে।
অ্যাবরাপা’র ডিরেক্টর অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস মার্সেলো ডুয়ার্তে মন্টেরো বলেন, “বিশ্ব যখন সাপ্লাই-চেইন সংকট ও তুলার ঘাটতির মুখোমুখি হয়, তখন ব্রাজিল কুশলীভাবে সকল সম্পর্ক বজায় রেখে তুলা সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে এই ব্যবসায়কে টিকিয়ে রাখছে।
যেহেতু আমরা এই কার্যক্রমের দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করছি এবং ব্রাজিলীয় তুলা বাণিজ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি, সেহেতু আমরা তুলার ট্রেসেবিলিটি, লজিস্টিকস, সাসটেইনাবিলিটি ভার্টিকেলস ও টেকনোলজি জুড়ে সল্যুশন প্রদান অব্যাহত রাখবো।”
২০২০ সালের শেষ দিকে যাত্রা শুরুর পর থেকে ব্রাজিলের তুলা বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নীত করা, বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল শিল্পের জন্য নির্ভরযোগ্য ও মানসম্পন্ন তুলা উৎপাদন ও সরবরাহই ছিল কটন ব্রাজিলের গ্লোবাল মিশন।
পণ্যের স্থায়িত্ব, গুণমান ও ট্রেসেবিলিটি সম্পর্কিত কার্যক্রমগুলোকে আরও শক্তিশালী এবং বিশ্বব্যাপী বি-টু-বি গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করাই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য।
সেলার্স মিশন কার্যক্রম চলাকালে, চারটি মূল স্তম্ভ তুলে ধরা হয়;
· গুণমান ও উৎপাদন- যা ব্রাজিলীয় তুলার মান নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নির্ভরযোগ্যতা ও বর্তমান তুলা শস্যের প্রধান এইচভিআই সূচকসমূহ অনুসন্ধান করেছে৷
· স্থায়িত্ব- যা এবিআর (রেস্পন্সিবল ব্রাজিলিয়ান কটন) সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামকে তুলে ধরে এবং এটি নিশ্চিত করে যে, পরিবেশগত টেকসই উৎপাদন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তুলা অর্থনীতি আসছে।
· ট্রেসেবিলিটি- এটি এই প্ল্যাটফর্মে নতুন এক বৈশিষ্ট্যের সূচনা করেছে।
· রপ্তানি- এটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহের চ্যালেঞ্জ এবং উৎপাদন ও সরবরাহের চাহিদা পূরণের বিকল্প পথ বের করছে।
অ্যাবরাপা’র প্রেসিডেন্ট জুলিও সিজার বুসাতো বলেন, “তুলা তার কৃত্রিম রূপের তুলনায় পরিবেশবান্ধব ফাইবারের উৎস হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করছে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ীদের জন্য একটি প্রধান উপাদানে পরিণত হচ্ছে।
আমরা তুলা চাষ পদ্ধতির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত এবং পরিবেশের উপর তুলা চাষ পদ্ধতির প্রভাব কমাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত কৃষি সরঞ্জামের সাহায্যে আমরা তুলার টেকসই অর্থনীতি গঠন করতে সক্ষম।”
ভবিষ্যতে এশিয়ার ক্রমবর্ধমান বাজারের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনার পাশাপাশি, প্রধান দেশগুলোর বাজারের শেয়ারকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রোগ্রামটির লক্ষ্য।
বর্তমান-ভবিষ্যতের কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে প্রোগ্রামটি ব্রাজিলিয়ান তুলার গুণমান, ট্রেসেবিলিটি ও স্থায়িত্বের জন্য বাজার সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
-শিশির