গ্লোবাল অ্যাকসেসিবিলিটি অ্যাওয়ারনেস ডে পালিত

গ্লোবাল অ্যাকসেসিবিলিটি অ্যাওয়ারনেস ডে পালিত
গ্লোবাল অ্যাকসেসিবিলিটি অ্যাওয়ারনেস ডে পালিত

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ
বিশ্বব্যাপী উদযাপিত গ্লোবাল অ্যাকসেসিবিলিটি অ্যাওয়ারনেস ডে (জিএএডি) প্রথমবারের মতো এবছর বাংলাদেশেও উদযাপন করা হয়েছে।

এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের বিসিসি অডিটোরিয়ামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং এটুআই কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি জনাব ভ্যান নুয়েন এবং বাংলাদেশ হুইল চেয়ার ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক জনাব মোহাম্মদ মহসিন উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওয়েবসাইটে অভিগম্যতা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘এম্পোরিয়া’, এটুআই-এর ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তপাঠ’ এবং অনলাইন জব পোর্টাল ‘বিডিজবস’-কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এছাড়াও ওয়েবসাইটে প্রতিবন্ধীদের অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণের বিভিন্নভাবে কারিগরি সহায়তা প্রদান করায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (বেসিস) সম্মাননা দেওয়া হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জনাব মো. আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি, বলেন, নাগরিকবান্ধব বর্তমান সরকার তার প্রতিটি উন্নয়ন এজেন্ডায় প্রতিবন্ধিতা-কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

বিশ্বের প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদে স্বাক্ষর এবং অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকার ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করেছে, যেখানে ডিজিটাল সেবায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিগম্যতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অভিগম্যতার ব্যাপারে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এখন থেকে প্রতি বছরই দিবসটি পালনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে আইসিটি বিভাগের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা তুলে ধরে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, বলেন, উন্নয়নের সকল সুবিধা সবাই যেনো সমভাবে পায় সেলক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আইসিটি বিভাগের প্রতিটি প্রকল্প পরিকল্পনায়ও ইনক্লুসিভনেসের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রযুক্তির সুবিধা সকলেই পেতে পারেন।

এছাড়াও নাগরিকবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সরকারি সেবাব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের সকল ওয়েবসাইট এবং ডিজিটাল সেবা অভিগম্য করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

এটুআই-এর উদ্যোগে ডিজিটাল সেবা এবং প্রতিবন্ধিতা-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরামর্শ কর্মশালার মাধ্যমে ইতোমধ্যে জাতীয় ওয়েব এবং ই-সেবা অভিগম্যতা বিষয়ক একটি গাইডলাইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

গাইডলাইনটি চূড়ান্ত করার জন্য দ্রুত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপন করা হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি জনাব ভ্যান নুয়েন -বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ-২০০৬-এর ধারা ৯ অনুযায়ী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সকল সেবায় অন্যান্য নাগরিকের মত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমঅধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং ধারা ২১-এ ইন্টারনেটে তথ্য সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সেবাসমূহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার-উপযোগী করার বিষয়েও কথা বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর প্রতিটি লক্ষ্যমাত্রায় অন্তভূক্তিমূলক সেবাব্যবস্থা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও কাউকে পেছনে ফেলে নয় (লিভিং নো অন বিহাইন্ড) ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীবান্ধব সেবাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ হুইল চেয়ার ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক জনাব মোহাম্মদ মহসিন তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে গ্লোবাল অ্যাকসেসিবিলিটি অ্যাওয়ারনেস ডে-কে সাফল্যমন্ডিত করতে সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে একযোগে কাজ করার অনুরোধ জানান।

সকল ডিজিটাল সেবা অভিগম্য হলে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর কারও সহযোগিতার আশায় পিছিয়ে পড়তে হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে যাওয়ার পথে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর ইক্যুয়ালিটি থেকে ই-কোয়ালিটিতে (ইলেক্ট্রনিক কোয়ালিটি) যেতে চাই।

সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে প্রথম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে এবং ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন করেছে। সামনের দিনগুলোতে পৃথকভাবে সেবা ডিজিটাল না করে প্রতিটি শাখাকে সংযুক্ত করে অন্তভূক্তিমূলকভাবে করা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বিশ্বের এক বিলিয়নেরও বেশি বিশেষভাবে সক্ষম/প্রতিবন্ধী নাগরিকের প্রত্যেকের ডিজিটাল অভিগম্যতা প্রদান এবং অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর মে মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক অভিগম্যতা সচেতনতা দিবস (জিএএডি) পালিত হয়ে আসছে।

দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হওয়া দিবসটির উদ্দেশ্য হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল (ওয়েব, সফটওয়্যার, ও মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি) অভিগম্যতা এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে সকলকে অবহিত করার মাধ্যমে চিন্তার দ্বার উন্মোচন করা।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর সহায়তায় পরিচালিত এটুআই এই দিবসটি আয়োজন করা হয়।

এটুআই-এর হেড অফ সোশ্যাল ইনোভেশন ক্লাস্টার জনাব মানিক মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এটুআই-এর যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) জনাব নাহিদ সুলতানা মল্লিক।

কাস্টমার ইনোভেশন ল্যাব-সিআইএল শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন হেড অফ সিআইএল জনাব মো. নাহিদ আলম এবং বাংলাদেশের অভিগম্য ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল সেবা প্রদর্শন নিয়ে আলোচনা করেন এটুআই-এর ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট (ডিজেবিলিটি) জনাব ভাষ্কর ভট্টাচার্য। দিবসটি উদযাপনে আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে একটি গীতিনৃত্য পরিবেশন করে সুইড বাংলাদেশ এবং ‘নব আনন্দ’ নামে সংগঠনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ‘আলোর পাখিরা’ নামে একটি নাটক পরিবেশন করেন।

এসময় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ-এর চিফ ইনোভেশন অফিসারবৃন্দ, এটুআই-এর কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

-শিশির

FacebookTwitter