আনোয়ারা আক্তার শিউলী:
২০০২ সালে নবম শ্রেণি পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর খানেক পরেই আমার বড় ছেলের জন্ম। তার ৪ বছর পরে আমার ছোট ছেলে।

৪ বছর পর বড় ছেলে শাওনকে স্কুলে ভর্তি করি, শাওনকে স্কুলে দিয়ে ২/৩ ঘন্টা স্কুলে বসে থাকতে হতো।

ঠিক তখন মাথায় আসলো বসে থাকা সময় টাকে কাজে লাগাই। যেই কথা সেই কাজ শুরু হলো বিভিন্ন কাজ শেখা।

মায়ের বাড়ি (নানাবাড়ি) জামাল পুর হওয়াতে সেখানেই হাতের কাজের থ্রীপিস বানাতে দেই।

একদিকে কাজ শিখছি এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা অন্য দিকে ব্যবসা আর বাচ্চাদের বেড়ে উঠাতে সময় দেয়া।

২০১৩ সালে আমার আঞ্চলিক পর্যায়ে জামালপুর এবং যশোরে আমি ৩০টি টিম লিডার তৈরি করি। ১ জনের মাধ্যমে ৫০ জন নারীর হাতের কাজ করাতাম।

এতে করে ১৫০০ নারী ঘরে বসে হাতের কাজ করে ঘরে বসে আয় করার সুযোগ পেয়েছে এবং কারখানায় ফুল-টাইম কর্মচারী ১৪ টি এমব্রয়ডারি মেশিন, ১০ টি সেলাই মেশিন এবং ৪০ টি কারর্চুপির ফ্রেম কাজ চলতো।

এছাড়া বাংলাদেশের সব এলাকায় আমার পণ্যের প্রচার ও প্রসার হয়। আমার মনে হলো নারীদের জন্য কিছু করা দরকার। যারা আমার মতো অবহেলিত এবং নির্যাতিত, তাদের হয়ে আমি কাজ করবো। তখন থেকে শাওন ক্রাফটের পাশাপাশি আমি কারুশৈলী কুটির শিল্পের কাজ হাতে নিলাম।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কারুশৈলী কুটির শিল্প নারী উন্নয়ন সংগঠনের অনুমোদন পাই ২০১৪ সালে।

এর মধ্যে আমি ফ্যাশন ডিজাইনের ডিপ্লোমা কমপ্লিট করি। কারুশৈলী কুটির শিল্পের মাধ্যমে ৬৪ টি জেলায় এই পযর্ন্ত ৫৫০০ মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আজ এদের মধ্যে অনেকেই স্বাবলম্বী।

এ যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ এ……

বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ শিখে পুরস্কার পাই। এতে করে আমার মনে হলো আমি কিছু পারবো। আমাকে দিয়ে কিছু করা সম্ভব।

মায়ের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার নিয়ে গজ কাপড় কিনে নকশা করে হাতের কাজের জন্য পাঠিয়ে দিলাম জামালপুরে।

১৫ দিনের মাথায় আমার কাপড়গুলো সুন্দর নকশার থ্রি পিস হয়ে যায়। আমি ৫ টি ড্রেসে ২০০০ টাকা প্রফিট করি। এতে আমার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়।

আবার ২০ টি ড্রেসে নকশা করি এবং সেগুলো বিক্রি করি। এসব কাজে সহযোগিতা করেছে প্রতিবেশী ও ছেলের স্কুলের বন্ধুদের মায়েরা।

এরপর ২০০৮ সালে হাঙ্গার প্রজেক্টের পরিচয় হয় এবং আত্মকর্মী হিসেবে ট্রেনিং নিলাম। গণশিক্ষার ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজে যুক্ত হই। বয়স্ক ও ঝড়ে পড়া শিশুদের জন্য নিজেও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হই।

একদিকে সংসার সামলানোর গুরুদায়িত্ব, অপরদিকে পড়াশোনা ও বিভিন্ন ট্রেনিং এবং সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা। সব সামলাতে আমার অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। রাত জেগে কাজ করতে হয়েছে। তবুও, আমি থেমে যাইনি। এরপর স্বামীকে সব খুলে বলি।

প্রথম দিকে অনুমতি না দিলেও পরে রাজি হয়ে আমাকে কাজের অনুমতি দেয়। তবে নিজ এলাকায় করা যাবে না। তাই টোলারবাগে আমি কোনো ব্যবসা পরিচালনা করতে পারিনি।

মিরপুরের আনসার ক্যাম্পে একটি ছোট দোকান নিলাম। ২০০৯ সালে একটা সেলাই মেশিন ও ১ টি এমব্রয়ডারি মেশিন বছর যেতেই খুব ভালো করি। ১ বছরে ৬ টি মেশিন হয় অর্থাৎ ৬ জন কর্মচারী যুক্ত করি।

এরপর এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে আমি কিছু ট্রেনিং নিলাম এবং ঢাকা সহ আঞ্চলিক মেলা করি। আম্বার স্টাইল, নারীমেলা, আড়ংসহ বিভিন্ন সুনাম ধন্য প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো সুযোগ পায়।

২০১১ সালে স্বদেশ ফাউন্ডেশন থেকে নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড পাই। এরপর স্বনির্ভর থেকে কাটিং সেলাই ট্রেনিং নিলাম। যুব উন্নয়ন থেকেও বিভিন্ন ট্রেনিং নিলাম।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন ট্রেনিং নিলাম। সবশেষে শেখ ফজিলাতুন্নেছা কারিগরি টেনিং ইন্সটিটিউট থেকেও ট্রেনিং নিলাম। এরকম সরকারি এবং বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আমি নিজে দক্ষ হয়েছি।

আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথে নানান বাঁধা গুলোই আজ আমাকে এই পযর্ন্ত আসতে সহযোগিতা করেছে।

যেখানেই আমি সমস্যায় পরেছি সেই কাজ গুলোই আমি আরো চ্যালেঞ্জ নিয়ে সম্পূর্ণ করেছি।

কারুশৈলী মেম্বাদের ২৫০০ টাকা করে সমিতি করে আবাসন প্রকল্প করেছি। এপযর্ন্ত ২ টি প্লট ২০ জন মিলে কিনেছি।

কারুশৈলী রিসোর্টের জায়গা কিনেছি ছোট পরিসরে। কারুনিবাসে মেয়েদের থাকার হোস্টেল সুবিধা জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।

আমি চাই আমার মত যারা স্বপ্ন দেখে তারা যেনো সুযোগের অভাবে পিছিয়ে না পডেন। এর জন্য ঈদের পর কারুশৈলী সুপারশপ নেয়ার পরিকল্পনা করেছি ইনশাআল্লাহ্ এটাও পুরন হবে।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily