শিশির মোজাম্মেলঃ
শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্ত এখনও স্কুল জীবনের কোনো এক বিশেষ শিক্ষকের স্মৃতি ভূলে যাবার নয়।
সেই সব প্রিয় শিক্ষকদের সম্মাননা জানাতে আইপডিসি-প্রথম আলো আয়োজন করে চলেছে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা।
শিক্ষাজীবনের প্রিয় শিক্ষকের ওই শিক্ষাই কারো কারো জীবন বদলে দিয়েছে। সে সব শিক্ষাগুরুদের স্মরণ করতে গিয়ে এমন অনেক টুকরো স্মৃতিচারণা করলেন এখনকার কয়েকজন শিক্ষক।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২১’-এর উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও সংস্কৃতি জগতের অনেকে তাঁদের প্রিয় শিক্ষকদের স্মৃতিচারণ করেন।
শিক্ষাজীবনে প্রত্যেক মানুষের কোনো না কোনোভাবে অবদান রাখা সেই সব প্রিয় শিক্ষককে এবার তৃতীয়বারের মতো সম্মাননা দেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ও প্রথম আলো।
প্রিয় শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদানে দরকার আপনার মনোনয়ন। নিয়মানুযায়ী, যে শিক্ষককে মনোনীত করতে চান তাঁর বয়স কমপক্ষে ৪০ হতে হবে। আর প্রিয় শিক্ষক মনোনয়নকারীদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর।
অনলাইনে (http://www.priyoshikkhok.com) নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এই মনোনয়ন দেওয়া যাবে।
৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই মনোনয়ন কার্যক্রম চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।
এর আগে ২০২০ সালে ৯ জন এবং ২০১৯ সালে ১২ জন প্রিয় শিক্ষককে সম্মাননা দিয়েছিল আইপিডিসি ও প্রথম আলো।
উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত হয়েছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছোটবেলায় ছয় মাস পড়ানোর পরও প্রিয় শিক্ষক কোনো টাকা নেননি।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষকের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষকদের কোনো দিন ভুলব না; যাঁরা সমস্ত জীবন উৎসর্গ করেছেন অন্যের জীবনকে ভালো করার জন্য।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মফিজুর রহমান ছোটবেলার প্রিয় শিক্ষককে স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, তিনি ছোটবেলায় পড়াশুনায় মনোযোগি ছিলেন না। পড়তে যেন না হয় সে জন্য মাটির শ্লেট ভেঙ্গে ফেলতেন, সেই মাটির স্লেট বারবার ভাঙতেন বলেই মৌলভি শিক্ষক টিনের স্লেট ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক শামসাদ মর্তুজা বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা মোমবাতির মতো জ্বলতে থাকি। কিন্তু আলোটা অন্যকে দিই।’
আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার মান ভালো করতে হলে শিক্ষকদের কাছে যেতে হবে। তাঁদের ভালো-মন্দের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। তাঁদের সম্মান ও সম্মানী দিতে হবে।
নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যবসায়িকভাবে সফল হওয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনে যেন ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়, সে জন্যই তাঁরা এ ধরনের বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনে কথা বলার প্রসঙ্গ টেনে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বললেন, তাঁর কাছে মনে হয়েছে অনেক দিন পর যেন স্কুলের ক্লাসে ঢুকে পড়েছেন। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তিটা অনেক বড়। কারণ, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। চিত্রনায়ক ফেরদৗস আরও বলেন, সেই তখন যেগুলো শিখেছি এখন সেগুলোই কাজে লাগছে। বিশেষ শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ্ আবু সাঈদ স্যারের ছাত্র ছিলেন তিনি, সেই স্যারের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে ফেরদৌস বললেন, স্যার বেশি প্রিয় ছিলেন এ জন্য যে, স্যার ক্লাসে কোন পড়া পড়াতেন না। সারাক্ষণ শুধু গল্প করতেন। আসলে সেই গল্পগুলি এখন জীবনে অনেক কাজে লাগছে।
নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত সংস্কৃতিকে রাজনীতি থেকে এবং শিক্ষাকে বাণিজ্য থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানান।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান করোনাকালে চিরবিদায় নেওয়া শিক্ষকদের পরিসংখ্যান দেন। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের স্মরণ করেন। তিনি করোনায় মৃত তাঁর সহকর্মীদেরও গভীর শ্রদ্ধা জানান। এই সংকটের মধ্যেও নতুন সম্ভাবনা এবং উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। করোনাকালে নতুন শিক্ষকদের পাশাপাশি প্রবীণ শিক্ষকেরাও অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান করিয়েছেন। এই অভিজ্ঞতাকে সামনেও কাজে লাগাতে হবে।
প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রথম আলো ভালো কাজগুলো অব্যাহত রেখেছে। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো আমরা সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিক্ষকদের মথ্যে আরও বক্তৃতা করেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম, উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও প্যারেরা, গতবার প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পাওয়া ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুলের শিক্ষক আফরুজ জাহান, প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মুনির হাসান।
-শিশির