সিটি করপোরেশনঃ
রাজধানীতে কোরবানীর পশু বর্জ্য অপসারণে এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সাড়ে ২১ হাজার কর্মী প্রস্তুত রয়েছেন।
এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১১ হাজার ৫০৮ জন এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০ হাজার কর্মী ঈদের দিন থেকে বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবেন।
বর্জ্য অপসারণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এবং এই কার্যক্রম তদারকীর লক্ষ্যে দুই সিটি কর্পোরেশনই একাধিক মনিটরিং টিম গঠন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, এই সিটির আওতাধীন এলাকা ও পশুর হাট গুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সরেজমিন মাঠ পর্যায়ে তদারকির জন্য ১০টি টিম গঠন ও একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। পশুর হাটের বর্জ্য এবং ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে ২৪ জুলাই দুপুর ২টা পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকা ও পশুর হাটগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সরেজমিন মাঠ পর্যায়ে তদারকির জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে এই টিমগুলো গঠন করা হয়েছে।
কর্পোরেশনের শীতলক্ষ্যা হলে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সচিত্র তদারকি করা হবে। কর্পোরেশনের আওতাধীন যেকোনো নাগরিক তার নিজ এলাকায় সৃষ্ট বর্জ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রেরণ বা পশুর বর্জ্য অপসারণ সম্পর্কিত সমস্যা সুরাহার জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে জানাতে পারবেন। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্পোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিন শিফটে ১৮ জুলাই দুপুর ২টা থেকে ২৪ জুলাই দুপুর ২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করবেন।
পাশাপাশি ৯০টি খোলা ট্রাক, ৫৩টি কম্পেক্টর, ১২টি পানির গাড়ি, ১০২টি ডাম্প ট্রাক, ১৪টি পে-লোডার, ৮১টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ৯টি টায়ার ডোজার, ২টি ট্রেইলার, ৯টি স্কিড লোডারসহ প্রায় পৌনে ৪শ’ যান-যন্ত্রপাতি মাঠ পর্যায়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে নিযুক্ত থাকবে।
এছাড়াও নিয়মিত ৫ হাজার কর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ৫ হাজার কর্মী পশুর বর্জ্য অপসারণে নিযুক্ত থাকবেন। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রতি কাউন্সিলরকে ১ হাজার করে এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে ১ হাজার ৫শ’টি পরিবেশবান্ধব থলে প্রদান করা হয়েছে। এসব থলে যারা কোরবানি করবেন তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। কোরবানির পশুর বর্জ্য সেসব থলের মধ্যে ভরে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্পোরেশনের নির্ধারিত ব্যক্তিদের কাছে হস্তান্তর করবেন।
পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে দক্ষিণ সিটিতে প্রায় ৩০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ১৮০০ লিটার তরল জীবাণুনাশক ছিটানো হবে।
এদিকে ডিএনসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাশার মো. তাজুল ইসলাম জানান, এবার নগরীর ৫৪ ওয়ার্ডে আনুমানিক ২ লক্ষাধিক পশু কোরবানি দেয়া হবে। পশু জবাইয়ের জন্য ৩০৭টি স্থানে নগরবাসিকে পশু কোরবানি দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোরবানির জন্য সর্বমোট ২৫০ জন ইমাম ও ২৫০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য ডিএনসিসি’র নিজস্ব ২ হাজার ৬৬৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারী ব্যবস্থাপনায়সহ সর্বমোট ১১ হাজার ৫০৮ জন কর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে।
কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে দু’টি অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। নগরবাসী বর্জ্য সম্পর্কিত যেকোন তথ্য ০২-৫৮৮১৪২২০, ০৯৬০-২২২২ ৩৩৩, ০৯৬০-২২২২ ৩৩৪ এই নম্বরগুলোতে ফোন করে জানাতে পারবেন। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকী করার জন্য ২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদারকী টিম গঠন করা হয়েছে।
কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিকালীন কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জবাইকৃত পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং পশুর হাটসমুহ দ্রুত পরিস্কারের লক্ষ্যে কর্পোরেশনের নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি, ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি আউটসোর্সিং থেকে অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োজিত থাকবে। ঈদ উপলক্ষ্যে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে। এ লক্ষ্যে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক, খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারী এবং ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৪৯৩টি গাড়ী নিয়োজিত থাকবে।
পরিবেশ দুষণ রোধে ১১টি ওয়াটার বাউজার দ্বারা তরল জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রে করার ব্যবস্থা এবং সাড়ে ৬ লাখ বর্জ্য ব্যাগ, ৫০ টন ব্লিচিং পাউডার, ১০০৫ ক্যান স্যাভলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ল্যান্ডফিলে ঈদুল আযহার অতিরিক্ত বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২টি পরিখা খনন করা হবে এবং দিবারাত্রি কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ড্রেসিং কার্যক্রমে ৫টি এস্কেভেটর, ৬টি চেইন ডোজার, ১টি ট্যায়ার ডোজার ও ১টি পে-লোডার নিয়োজিত রাখা হবে।
- বাসস