প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এমন কিছু মানুষ আসেন, যাঁরা নিজেদের অসামান্য কীর্তিতে বদলে দেন ইতিহাস। নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মাধ্যমে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ নামক বিস্ময়কর গল্পের যাঁরা রূপকার, দেশের এমন অগ্রজদের নিয়ে আইপিডিসি ফাইন্যান্স-এর অনলাইন আয়োজন ‘অগ্রজ’-এর একবিংশ পর্বে চিত্রকর্মের মাধ্যমে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরার ভাবনা ও অমূল্য অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী আবদুস শাকুর শাহ।
স্বনামধন্য ব্যাংকার আনিস এ খানের সুচারু উপস্থাপনায় ‘অগ্রজ’-এ মনোজ্ঞ আলাপচারিতায় আবদুস শাকুর শাহ ফিরে তাকান শিল্প ও সংস্কৃতি জগতে তাঁর দীর্ঘ যাত্রার স্মৃতিতে।
বাঙালির লোকায়ত শিল্পরূপে নতুন আলোর সঞ্চার করে বাংলাদেশের চিত্রকলাকে সমৃদ্ধ করেছেন শিল্পী আবদুস শাকুর শাহ। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি, গ্রামীণ জীবনধারা ও প্রাচীন কাব্যের নানা অনুষঙ্গ সবসময় ছিল তাঁর শিল্পচর্চার অনুপ্রেরণা।
তাঁর চিত্রকর্মগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় মৈমনসিংহ গীতিকা, মহুয়া এবং মলুয়ার প্রেমের গল্প, নকশী কাঁথার মাঠ, ময়ূর, তোতা, হাতি, ষাঁড়, বিড়াল, বাঘ, সাপ, টিকটিকি ও আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতির নানান দিক।
অগ্রজ-এর এই অন্তরঙ্গ আড্ডায় আবদুস শাকুর শাহ রোমন্থন করেন চিত্রকর্মে বাংলার লোকশিল্প তুলে আনার সেইসব রঙিন স্মৃতি।
মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতা ও ভয়াবহ দিনগুলো সুনিপুণভাবে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন আবদুস শাকুর শাহ। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রকর্ম নিয়ে একাধিক একক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে।
আলাপচারিতায় আবদুস শাকুর শাহ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাও ভাগাভাগি করে নেন অগ্রজ-এর দর্শকদের সাথে।
বাংলাদেশ, ভারত, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, কানাডা, দুবাই, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আবদুস শাকুর শাহ-এর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে।
অগ্রজ-এর মঞ্চে নান্দনিক আলাপে আবদুস শাকুর শাহ দেশ-বিদেশে আয়োজিত সেসব প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কেও স্মৃতিচারণ করেন।
শিল্প ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে- ভারতের গুজরাটের ‘বেস্ট প্রাইজ অফ ললিতকলা আকাদেমি’, জাপানের ডাক ও টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রণালয়ের ‘দ্য এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’, বাংলাদেশের ১৩তম ও ১৫তম ন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনে যথাক্রমে ‘অনারেবল মেনশন অ্যাওয়ার্ড’ ও গোল্ড মেডেল, ইতালির ‘ইউনেস্কো এন্ড সিভিটেলা ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ’ ও এস এম সুলতান পদক (গোল্ড মেডেল)।
বাংলাদেশের ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ছাড়াও ইতালি, জাপান, দুবাই, ডেনমার্ক ও ফ্রান্সে আবদুস শাকুর শাহ-এর চিত্রকর্ম সংরক্ষিত রয়েছে।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অগ্রজ-এ আমরা এমন সব ব্যক্তিত্বের জীবনেই আলোকপাত করতে চাই, যাঁরা নিজেদের কার্যক্ষেত্রে অমূল্য অবদান রেখে দেশের জন্য ভবিষ্যৎ সাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে দিয়েছেন। বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ও চিরায়ত ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা অনন্য শিল্পী আবদুস শাকুর শাহ-এর মতো গুণী ব্যক্তিত্ব নিজের জীবনের অর্জন ও অভিজ্ঞতার গল্প ‘অগ্রজ’-এ এসে জানিয়েছেন, সেজন্য আমরা ভাগ্যবান। তাঁর উপস্থিতি আমাদের এই উদ্যোগকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে।’
-শিশির