“এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ”

“এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ”
“এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ বাংলাদেশ”

অনলাইনঃ
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “শোকেস বাংলাদেশ: চায়না-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট”।

ভার্চুয়াল ইভেন্টটিতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্ভব্য অংশীদারিত্বের সুযোগ ও পরিবর্তনশীল ভৌগোলিক ল্যান্ডস্কেপ এর মধ্যেও কৌশলগত সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দের সাথে চীনের সরকারি, বেসরকারি, নীতি নির্ধারণি, বিনিয়োগ, ব্যাংক ও অর্থনীতি খাতের চার শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রতিনিধি হিসেবে এই সম্মেলনে যোগ দেন।

বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা এবং দেশের জন্য কাক্সিক্ষত বৈশ্বিক বিনিয়োগ নিয়ে আসতে একসাথে কাজ করার লক্ষ্যে যৌথ সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই ওয়েবিনারটি ছিল তাদের এই যৌথ সহযোগিতার প্রথম উদ্যোগ।

অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশে-এর সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “যেহেতু বর্তমানে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশ্বিকভাবে তাদের পরিধি বর্ধনে নতুন ঠিকানার সন্ধান করছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যকার এই অংশীদারিত্ব, শতাব্দী প্রাচীন বন্ধুত্ব ও পরিচিতির কল্যানে নতুন ও অনাবিষ্কৃত সুযোগ সন্ধানের এক অনন্য প্রতিশ্রুতি রাখে ।

এই সুযোগগুলো পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগানোর জন্য ব্যাংক, বিনিয়োগকারী এবং সরকারের মধ্যকার অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশীদারিত্ব তৈরির পথে আজকের সামিট আমাদের প্রথম পদক্ষেপ।“

বিডা’র, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ওয়েবিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্যে তিনি আরএমজি, চামড়া, ঔষধ প্রস্তুতকারক খাত/এপিআই ও মেডিকেল সরঞ্জাম, সফটওয়্যার ও আইটি, এগ্রো ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরন, এগ্রো সরঞ্জামাদি, ইলেক্ট্রনিকস, মটরযান এবং জাহাজ নির্মাণ খাতসমূহে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগের বিষয়টি উল্ল্যেখ করেন।

বিডা প্রধান আরও বলেন, “বাংলাদেশ খুব দ্রুতই অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটি মহামারীর এই অস্থিতিশীল অবস্থায়ও প্রবৃদ্ধির হার হার ৫.২৪% পর্যন্ত ধরে রেখেছে। বিডা তার বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে আরও উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতেও কাজ করে যাচ্ছে।“

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, “এ ধরনের সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ সুবিধা উভয় দেশের অর্থনীতির টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত করতে জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহারে সক্ষম করে তুলবে। ”তিনি আরও বলেন, “সমৃদ্ধ যোগাযোগের জন্য মাল্টিমোডাল সংযোগ এবং শক্তিশালী বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশকেই লাভবান করবে।”

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোনস অথোরিটি (বিইজেডএ)-এর এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা বাংলাদেশে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। জমি ও শিল্প কাঠামোগত সহজলভ্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি, বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বজায় রাখে তার জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেবার উন্নয়ন চলমান রয়েছে।“

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান বলেন, “৯৭% শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ও অন্যান্য সুবিধার কারণে চীনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। আশা করছি, চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা আমাদের আত্ম-নির্ভশীল হয়ে উঠার পথে সহায়ক হবে।”

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, “গত বছর চীনের বার্ষিক আয়ের অগ্রগতির হার ছিল ২.৩% এবং একই সময়ে বাংলাদেশের আয়ের অগ্রগতির হার তুলনামূলক বেশি ছিল। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখছে, তা চীনকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলেছে।“

তিনি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রশংসা করে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সর্বোত্তম পটভূমি হিসেবে উল্ল্যেখ করে চীনা বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগ প্রবণতা বিশ্লেষণ করেন এবং দ্বিপার্শ্বিক বিনিয়োগ বর্ধনের পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুল রহমান (এমপি) বলেন, “আমাদের সরকার বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশের জন্য বানিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানে উৎসাহি। বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতিমালা ও ছাড়, বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করে।

আমরা চীনকে একটি শক্তিধর সহযোগী বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে মনে করি। আমরা আশা করি মুজিব বর্ষ (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্ম শতক) চলাকালীন সময়েই চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার এই বিনিয়োগ সহযোগিতা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।“

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বাণিজ্য মন্ত্রী এম.এ.মান্নান (এমপি) বলেন, “শোকেস বাংলাদেশ ২০২১-এর মতো প্ল্যাটফর্ম দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি উন্নয়নের লক্ষ্য পূরনে, সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সম্ভব্য বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।“

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (চীন) লিমিটেড-এর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও জেরী ঝ্যাং বলেন, ”আমি আরও একবার বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগসমূহ, বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস, চেম্বার অফ কমার্স এবং অগণিত গ্রাহকদের তাঁদের বহু বছর ধরে আস্থা ও সমর্থনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ দিতে চাই। চীন-বাংলাদেশ-এর এই বানিজ্যিক সম্পর্কে বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন স্বচক্ষে দেখতে আমরা উভয় দেশ একত্রে কাজ করছি।“

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট লিন ওয়েইগিয়ান; বাংলাদেশে অবস্থিত ওভারসিজ চীনা অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট ঝুয়াং লিফেং; সাউথ এশিয়া অপো-এর রিজনাল ফিন্যান্স ডিরেক্টর জেড চ্যান; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং মোহাম্মদ এনামুল হক; এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড চীন-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড কো-হেড, ক্লায়েন্ট কভারেজ, কর্পোরেট কমার্শিয়াল ইন্সটিটুশনাল ব্যাংকিং জেন লু।

দীর্ঘ ১১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকই দেশের একমাত্র বহুজাতিক ব্যাংক, যার রয়েছে বাংলাদেশে দৃঢ় স্থানীয় উপস্থিতি এবং এর বৈশ্বিক পরিধি ও পণ্য কাজে লাগানোর সক্ষমতার অনন্য এক সংমিশ্রণ।

বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের একজন হিসেবে ব্যাংকটি নিজেই দেশে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসা এবং বিদেশী বিনিয়োগকে সহজ করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য লেনদেনের মধ্যে বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বিদেশী বেসরকারি বিনিয়োগ লেনদেন, যা বাংলাদেশের জন্য এ যাবৎকালের একক বৃহত্তম ভোক্তা খাত অধিগ্রহণ ছিল, তার এক্সক্লুসিভ ফাইন্যান্সিয়্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছে এই ব্যাংক।

২০১৮ সালে ব্যাংকটি ঢাকা স্টক একচেঞ্জে যেকোন বিদেশী স্টক একচেঞ্জের জন্য প্রথমবারের মতো সম-অংশগ্রহণ সুবিধা চালু করে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড “বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট” শীর্ষক ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই ইভেন্টের অধীনে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর, হংকং এবং লন্ডনে ছয়টি বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

-শিশির

FacebookTwitter