সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০ ঘোষণা

সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০ ঘোষণা
সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০ ঘোষণা

অর্থনীতিঃ
আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি যৌথভাবে একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০ ঘোষণা করেছে।

এই বছর সর্বমোট ১৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্ব বিএসসিইএ ২০২০- স্বীকৃতি অর্জন করেন যেখানে ১১টি ক্যাটাগরিতে ১২ বিজয়ী ও ৩টি স্পেশাল মেনশন রয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণের কল্যাণে বর্তমানে বাংলাদেশে সাপ্লাই চেইন ইকোসিস্টেম বিকশিত হচ্ছে।

আর এই খাতের রূপান্তরে ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সাথে যৌথ উদ্যোগে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ২০১৮ সালে প্রবর্তন করেছিল সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড।

তারই ধারাবাহিকতায় এবছর তৃতীয়বারের মতো সম্মানজনক এই পুরস্কারটি প্রদান করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ মঙ্গলবার আয়োজনটি আইপিডিসি ফাইন্যান্স-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এই আয়োজনের নলেজ পার্টনার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিল ইন্টারন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন এডুকেশন অ্যালায়েন্স (আইএসসিএএ)।

সংগঠনটির রিজিওনাল সিইও এজাজুর রহমান অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি ড. রুবানা হক।

তিনি বলেন, “আইপিডিসি সবসময়ই এরকম বিশেষ কিছু করে। আমি পুরস্কারটির প্রবর্তক উভয় প্রতিষ্ঠানকে এরকম সময়োপযোগী পদক্ষেপের জন্য অভিনন্দন জানাই। কারণ, একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে যে কঠোর নিবেদন সেটিকে স্বীকৃতি ও প্রণোদনা দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

একজন ব্যক্তি বা একটি কৌশল রাতারাতি কোনো প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলে না বরং প্রতিষ্ঠান গঠনের পেছনে দলগত প্রচেষ্টা থাকে পুরোটা জুড়ে। যারা প্রতিষ্ঠানের সাপ্লাই চেইন ইকোসিস্টেমের অংশীদার হয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন তাদের প্রচেষ্টাকে এভাবেই অভিনন্দিত করা ও স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।”

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে বলেন, “অনেক ঘটনাবহুল একটি বছর আমরা দেখতে পেলাম। ২০২০ সাল আমাদের সবার জীবনেই এক ব্যতিক্রমী বছর হয়ে থাকবে। এরকম মহামারি আমাদের কারো প্রত্যাশাতেই ছিল না। কিন্তু এরকম একটি বছর প্রতিষ্ঠানগুলো মোকাবেলা করেছে যেসব নায়কদের কল্যাণে তারা হলেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাপ্লাই চেইন পেশাদারগণ। আপনারাই এই স্থির হয়ে যাওয়া সময়ে কার্যক্রম গতিশীল রাখতে ভূমিকা রেখেছেন সবচেয়ে বেশি, পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। যদি আপনারা হাল ছেড়ে দিতেন তাহলে আমাদের এগিয়ে চলা অব্যাহত থাকত না। তাই সকলের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই, অসাধারণ দক্ষতায় আপনারা সামলে নিয়েছেন এই বছরটিকে।”

এই আয়োজনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আইপিডিসি ফাইন্যান্স-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মমিনুল ইসলাম বলেন, “আজকের এই আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুর পুরোটা জুড়েই কেবল উদ্ভাবন আর উদ্ভাবন। যাঁরা ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সম্পদকে কাজে লাগাতে, প্রাতিষ্ঠানিক কালচার সমুন্নত রাখতে এবং ধারাবাহিক সহযোগিতার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী কৌশলের সূচনা করেন এই অসাধারণ অর্জনের স্বীকৃতি তাঁদের প্রাপ্য। গত এক দশকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে সাপ্লাই চেইন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে আরো সক্ষম করতে যে ধরণের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা দরকার তার উন্নয়নে মূল ভূমিকা রাখবে। এজন্যই তিন বছর আগে এই পুরস্কারটি যৌথভাবে প্রবর্তন করে বিএসসিএমএস এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স।”

বিএসসিএমএস-এর সভাপতি নকিব খান বলেন, “এই বছরটি সকলের জন্যই এক অভাবনীয় বছর এবং সংকট চলাকালীন সময়ে সাপ্লাই চেইন ছিল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ খাতের একটি। সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই বছরটি আমাদের সবার জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল, তবে সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে এবং জণগণ, প্রতিষ্ঠান, দেশের জন্য সেবা দিয়ে যেতে মহামারি সত্ত্বেও আমাদের সমস্ত সাপ্লাই চেইন পেশাদারকে তাদের কর্মকাণ্ড বাধাহীনভাবে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।”

বিএসসিএমএস বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইন পেশাদার এবং প্র‍্যাক্টিশনারদের একটি প্ল্যাটফর্ম। আইপিডিসি বাংলাদেশে অর্ধেকেরও বেশি সাপ্লাই চেইন অর্থায়নের চাহিদা পূরণ করছে। এই খাতের উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইপিডিসি সাপ্লাই চেইনের দক্ষতা এবং শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে অনুপ্রাণিত করতে কাজ করছে। আইপিডিসি যেমন কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগের (সিএমএসএমই) সমৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেয়, তাদের সাপ্লাই চেইন সম্পর্কিত কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আকর্ষণীয় রেটে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানে সহযোগী হয়ে পাশে থাকে আইপিডিসি ফাইন্যান্স। আইপিডিসি-এর সিইও মমিনুল ইসলাম আশা করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সাপ্লাই চেইন সেক্টর আকারে বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান তখনো সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্স (এসসিএফ)-এর গ্রাহকদের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের বিশেষ উপদেষ্টা ইমরান রহমান, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান মাসুদ খান, অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়ারুল হক’কে নিয়ে গঠিত একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র জুরি প্যানেল ৮৫টিরও বেশি মনোনীত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্য থেকে বিজয়ীদের বাছাই করেন।

বাংলাদেশের উৎপাদনমুখী ও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যাঁরা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁদের এই পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেহজাদ মুনিম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ; রূপালী চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড; সুদর্শন রেড্ডি, চিফ অপারেটিং অফিসার, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড; আশীষ গোপাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড; বিশাল গুপ্ত, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রেকিট বেনকিজার (বাংলাদেশ) লিমিটেড; আবির আহমেদ রাব্বি, সভাপতি, সাপ্লাই চেইন অ্যালায়েন্স।

বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস ২০২০-এর বিজয়ীরা
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড এবং ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড উভয়ই গ্রাহকসেবা, পণ্যের গুদাম ব্যবস্থাপনা ও বিতরণে তাদের দক্ষতার জন্য যৌথভাবে বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০ পুরস্কার জিতেছে। অ্যাপেক্সের কৌশল ছিল পণ্যের মজুদ সমুন্নত রাখা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বজায় রাখা। অন্যদিকে ম্যারিকো বাংলাদেশ গ্রাহকসেবা নিশ্চিতের জন্য একাধিক কেপিআইকে শক্তিশালী করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।

রেকিট বেনকিজার (বাংলাদেশ) লিমিটেড লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন ম্যানেজমেন্ট ক্যাটাগরিতে পুরস্কার গ্রহণ করেছে।

কৃষকদের জীবিকা উন্নয়ন, সরবরাহকারীদের ক্ষতি বিশ্লেষণ, সরকারের সাথে যৌথভাবে অংশীদার হয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করাসহ সরবরাহ চেইনের প্রসারের জন্য সাপ্লাই চেইন কোলাবোরেশান অ্যান্ড পার্টনারিং- পুরস্কারটি জিতে নিয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ। সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট ও সাপ্লাই চেইন প্ল্যানিং প্রসেস – এই দুটি পুরস্কার অর্জন করে ম্যারিকো বাংলাদেশ। টেকসই পেপার ও প্লাস্টিক প্যাকেজিং প্রজেক্টের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড সাপ্লাই চেইন সাসটেইনাবিলিটি পুরস্কার অর্জন করে।

সেরা সাপ্লাই চেইন পদ্ধতি বাস্তবায়নে যেসব পেশাদার কাজ করছেন তাঁদেরকে স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সাপ্লাই চেইন ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট পুরস্কার পেয়েছে সাপ্লাই চেইন অ্যালায়েন্স। বার্জার আস্থা ও ক্লাউডে সোর্সিংয়ের তাৎক্ষণিক ট্র‍্যাকিং সিস্টেম বাস্তবায়ন- এই দুই প্রজেক্টের জন্য টেকনোলজি অ্যাজ সাপ্লাই চেইন এনাবলার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ।
ক্লাউড কিচেন ভিত্তিক ডিজিটাল ফুড চেইনসহ অন্যান্য ব্র‍্যান্ড যে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে সেই ক্লুডিও বাংলাদেশ-এর কিশোর আহমেদ হাশেমি টেকনোলজি এজ সাপ্লাই চেইন এনাবলার ক্যাটাগরিতে স্পেশাল মেনশন স্বীকৃতি পেয়েছেন।

ইয়ং সাপ্লাই চেইন ট্যালেন্ট অব দ্য ইয়ার ক্যাটাগরিতে এই বছর দুইজন নারী পুরস্কৃত হয়েছেন। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর আসমা আক্তার ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধি ও সেবার মধ্যে সমন্বয় সাধনের উদ্যোগের জন্য এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড-এর জেবা সামিহা সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রাহকের সেবা জোরদার করার জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেছেন ।

নেতৃত্বগুণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবনের জন্য ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ-এর হাসনাইন ইশতিয়াক সাপ্লাই চেইন প্রফেশনাল অব দ্য ইয়ার পুরস্কার জয় করেন। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাপ্লাই চেইন ইকোসিস্টেমে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর মোঃ আব্দুল আলীম, রেকিট বেনকিজার (বাংলাদেশ) লিমিটেড-এর মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিনকে এই ক্যাটাগরিতে স্পেশাল মেনশন প্রদান করা হয়।

-শিশির

FacebookTwitter