অনলাইনঃ
জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে যথোপযুক্ত পলিসি এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের সকল স্তরে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ইউএনএফপিএ ও এর অংশীদার সংগঠন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, একশন এইড বাংলাদেশ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং কেয়ার বাংলাদেশ যৌথভাবে ক্যানাডিয়ান এম্বাসি ও নেদারল্যান্ডস এম্বাসির অর্থায়নে গতকাল (০৮.১২.২০২০ইং) একটি অনলাইন লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
‘জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ও প্রতিকারে, প্রত্যেকের ভূমিকা আছে’ শীর্ষক এই অনলাইন অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়। এই লাইভ অনুষ্ঠানটিতে প্রায় তিনশোর অধিক নারী অধিকার কর্মী, সুশীল সমাজ সংগঠন, নীতিনির্ধারক, সরকারি মাল্টি-সেক্টরাল সেবাপ্রদানকারী সংস্থা ও গণমাধ্যম সংস্থা অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হাজারো মানুষ এই অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখেছেন।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার সারভাইভারদের জন্য সমন্বিত ও বৈষম্যহীন উপায়ে সরকারি মাল্টি-সেক্টরাল সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার তথাপি নির্যাতন হ্রাসের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে ‘জিবিভি সেবাসমূহে প্রবেশগম্যতা: বাস্তবতা, বাধা এবং সুপারিশ’ শীর্ষক একটি পলিসি নোট পরিবেশন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রপলজি বিভাগের প্রভাষক আইনুন নাহার, পিএইচডি; যেখানে তিনি সেবাসমূহে বিভিন্ন অসামঞ্জ্যতা ও আরও কার্যকরীভাবে সারভাইভারদের সেবাদানের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় সম্মানিত বক্তারা আশংকা প্রকাশ করেন যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ তাদের একঘরে করে দেয় এবং তাদেরকে সমাজে ‘অদৃশ্য’ জনগোষ্ঠিতে পরিণত করে।
আলোচনাটি পরিচালনাকালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী সদস্য ফস্টিনা পেরেরা সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার আগে সাম্যর নিশ্চয়তা দাবি করেন এবং বিভিন্ন মানুষের প্রয়োজন সমূহের ভিন্নতাকে বিবেচনায় রেখে সেবা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিজ এক্সিলেন্সি বেনওয়া প্রেফনটেইন, রাষ্ট্রদূত, ক্যানাডিয়ান এম্বাসি বলেন, “জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধের উপায় হলো সবাইকে মানুষ হিসেবে সম্মান করা। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের পরিসংখ্যানগুলোকে বিবেচনায় রেখে সকল ধরনের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে জরুরি অবস্থার জানান দিয়ে একসাথে এ পরিস্থিতি পরিবর্তনে কাজ করতে হবে।”
এ সময় ইউএনএফপিএ-এর রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. অসা টরকেলসন বলেন, “আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যথেষ্ট হয়েছে পারিবারিক সহিংসতা, যথেষ্ট হয়েছে ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, যৌন নির্যাতন। আর নয়। জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের প্রত্যেকের ভূমিকা আছে এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
আয়োজনে ফারাহ কবীর, কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশন এইড বাংলাদেশ তার বক্তব্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ মেনে চলা, নারীদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা ও পুরুষদের ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সংবেদনশীল করে তোলার প্রতি জোর দেন। গোলাম মনোয়ার কামাল, নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ নির্যাতন প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন যেখানে তিনি বলেন যে যৌন হয়রানিসহ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে; রাম দাস, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর – হিউম্যানিটেরিয়ান, কেয়ার বাংলাদেশ সবাইকে আহবান জানান যেনো ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে সবাই জেন্ডার বৈষম্য দূর করে জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন।
প্যানেল আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি মাল্টি-সেক্টরাল ডিপার্টমেন্ট – স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, সমাজ-কল্যান অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পুলিশ-এর প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে ও বৈষম্যহীন উপায়ে সেবা প্রদানের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
-শিশির