ধর্ম, হিন্দুঃ

আবহমান বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব। বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শরৎকালের এ মাতৃআরাধনায় জেগে ওঠে সমগ্র বাংলা। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী দূর্গোৎসব।

আজ দুপুর থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। বেলা দেড়টার দিকে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর একের পর এক বিভিন্ন মন্ডপ থেকে ঘাটে প্রতিমা আসতে থাকে বিসর্জনের জন্য।

এর আগে আজ সকাল নটা সাতান্ন মিনিটের মধ্যে দশমী পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা বা দর্পণ বিসর্জন হয়। অন্যদিকে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট পর শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা-নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হয়। দর্পণ বিসর্জনের পর দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেবদেবীর বিসর্জন দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরেন।

দুপুর বারোটা থেকে ঢাকায় প্রস্তুত থাকে বিসর্জনের ঘাটগুলো। রাজধানীর বেশিরভাগ বিসর্জন হয় বুড়িগঙ্গার সোয়ারীঘাটে। টঙ্গীর তুরাগ নদীতেও বিসর্জন হয়। সন্ধ্যা ছটার মধ্যে সবাই কে বিসর্জন শেষ করার নির্দেশনা দেয় মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি।

বিসর্জনের সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের পাশাপাশি বিসর্জন ঘাটে কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রস্তুত ছিল। এবছর পূজায় কোন ধরনের শোভাযাত্রা হয়নি। একটি মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জনে যে কজন প্রয়োজন (১০ জন) শুধু তাদেরই প্রতিমার সঙ্গে ঘাটে আসতে বলা হয়। প্রতিমা ঘাটে নেয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতি করেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়।

শ্রী সমীরেশ্বর ব্রহ্মচারীর কথায়, বিজয়া দশমীর দিন সংক্ষিপ্ত পূজার পর দর্পণ বিসর্জন হয়। কোন কোন জায়গায় দেবীর অপরাজিতা পূজাও হয়। এই দিনেই রাবণ বধের জন্য দশেরা উৎসবও পালিত হয়। এই দিনটিতে অসুর নিধনের পর অসুরের রক্ত দিয়ে দেবতারা বিজয় উৎসব পালন করে ছিলেন।

পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এজন্যই বিজয়া। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলিও। তবে করোনা মহামারির কারনে এবার কোলাকুলি হয়নি।

চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২২অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়,যাচ্ছন হাতিতে চড়ে। যদিও করোনা মহামারীর কারণে সংক্রমণ এড়াতে এবছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

এর আগে বেশ কিছু বিধি নিষেধও প্রদান করা হয়্। মন্ডপে দশৃনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় পূজামন্ডপ। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারনে সাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। পুজার সময় বেশির ভাগ ভক্তরা এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ।

এছাড়াও মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণ হচ্ছে কুমারী পূজা। সকল নারীর মধ্যে মাতৃরূপ এই উপলব্ধি সবার মধ্যে জাগ্রত করার লক্ষ্যে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে প্রতিবছর এই কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবার নির্দেশনার কারণে এ পূজা অনষ্ঠিত হয়নি।

বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ ছিল সরকারি ছুটির দিন। পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। এাছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি।

গতবছরের তুলনায় এবার ১হাজার ১৭৫ টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্য দিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পুজা হচ্ছে ৭৪০টি।

আজ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিজয়া দশমী উপলক্ষে দেশের সকল মানুষকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। পরিষদ শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মূখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করায় সকল রাজনৈতিক দল, সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

-কেএম/বাসস

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily