আইন আদালতঃ
রাজধানীর গুলশানের ‘হর্স অ্যান্ড হর্স’ নামের নামি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, বিয়ার ও সিসা জব্দ করেছে পুলিশ। বারের লাইসেন্স ছাড়াই এখানে দেদারসে এসব মাদক বেচাকেনা চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই।
অবশেষে গতকাল ২৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ এখানে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সময় রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৮১০ ক্যান বিয়ার, ২০৩ বোতল বিদেশী মদ এবং ২ কেজি সিসা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, ‘হর্স অ্যান্ড হর্স’ নামের প্রতিষ্ঠানটির রেস্টুরেন্ট চালানোর অনুমতি রয়েছে। তবে বার পরিচালনার জন্য কোন অনুমতি নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া জব্দ করা এসব মাদকদ্রব্যের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন ছাড়পত্র নেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, এখানে বিক্রি হওয়া মদ-বিয়ারের বেশিরভাগ আসে ডিউটি ফ্রি ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস থেকে। ওয়্যার হাউসের নির্ধারিত চোরাকারবারিরা এই রেস্টুরেন্টটিতে মদ-বিয়ার সরবরাহ করে। এছাড়া বিদেশ থেকে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে চোরাইপথে আসা মদও এখানে বিক্রি হয়ে আসছিল।
আর এই মাদকের ভোক্তা মূলত সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিসহ উচ্চবিত্ত পরিবারের উঠতি তরুণ-তরুণীরা। এছাড়াও এখানে নিয়মিত আসেন মিডিয়া জগতের সাথে জড়িত অনেকেই। তবে অভিযানের সময় এদের অনেককেই মুখ ঢেকে রাখতে দেখা যায়। এছাড়া অনেকেই কান ধরে উঠবস করে আর জীবনেও মদ্যপান না করার প্রতিশ্রুতি দেন! পরে তাদের অনেককে মানবিক কারণে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়।
অভিযানে অংশ নেয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা যখনই এ ধরনের অবৈধ মদ-বিয়ার বাণিজ্যের অভিযোগ পাই, সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
তিনি জানান, হর্স অ্যান্ড হর্স নামে ওই রেস্টুরেন্টে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরণের বিভিন্ন ব্রান্ডের বিলেতি মদ, বিদেশি মদ তারপরে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিয়ার এগুলো সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হচ্ছিলো।
অধিদপ্তরের গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক সামসুল কবির বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মাদক আইনে মামলা করা হবে।’
জানা গেছে, রেস্টুরেন্টটির মালিক মেহেরীন মনসুর বিদেশে পলাতক বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাইপোর স্ত্রী। অভিযানের খানিক আগেও তিনি রেস্টুরেন্টটিতে ছিলেন। গোপন সূত্রে কিন্তু অভিযানের সংবাদ পেয়েই ঠিক আগ মুহূর্তেই তিনি সটকে পড়েন আমেরিকাপ্রবাসী এই নারী। ফলে তাকে আটক করা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাফিউল্লাহ আল মুনির নামের জনৈক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের নাম ভাঙিয়ে এই রেস্টুরেন্টটিতে দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা চলছে। রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার রাকিবের দাবি, তাদের বৈধ বার লাইসেন্স আছে।
-ডিকে