নারী পাচার চক্রের মূলহোতা আজম খান গ্রেপ্তার

পাচার চক্রের মূলহোতা আজম খান গ্রেপ্তার
পাচার চক্রের মূলহোতা আজম খান গ্রেপ্তার

আইন আদালতঃ

দুই সহযোগীসহ দুবাইয়ে নারী পাচার চক্রের মূলহোতা আজম খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদের বিরুদ্ধে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে দুবাই পাচারের অভিযোগ আছে। সেখানে নিয়ে ওইসব নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে যৌনকর্মে বাধ্য করতো এই চক্রটি।

আজম খানের অন্য দুই সহযোগী হলেন, আল আমিন হোসেন ডায়মন্ড এবং আনোয়ার হোসেন ময়না।

তাদের গ্রেপ্তারসহ অভিযোগের নানা বিষয় আজ ১২ জুলাই, রবিবার বেলা পৌনে ১২ টায় রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এসময় সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, গত ৮ বছরে আজম খান সহস্রাধিক নারীকে পাচার করেছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ৬টি হত্যাসহ মোট ১৫টি মামলা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আজম খানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। তার বাবা দুবাইয়ে থাকতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে দুবাইয়ে চলে যান। দুবাইয়ে তার চারটি তারকাযুক্ত হোটেলের শেয়ার রয়েছে। হোটেলগুলো হচ্ছে- ফরচুন পার্ল হোটেল এন্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ার।’

নানা অভিযোগের ভিত্তিতে কিছুদিন আগে দুবাই সরকার আজম খানের পাসপোর্ট বাতিল করে তাকে দেশে ফেরত পাঠায়। তিনি দেশে এসে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও জানান সিআইডি কর্মকর্তা।

সিআইডি সূত্র জানায়, দুবাইয়ে বাংলাদেশ থেকে নারী পাচার চক্রের মূল হোতা আজম খান। চক্রটি হোটেলে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ অল্পবয়সী সুন্দরী তরুণীদের ফুঁসলিয়ে দুবাই পাচার করতো। তারা সেখানে নিয়ে তাদের নানা নির্যাতন করে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করতো।

প্রথমে আজম খানের সহযোগিরা ড্যান্স প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণীদের বিদেশে মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখাতো। পরে চাহিদামতো এসব তরুণীদের তারা দুবাইয়ে নিয়ে যেতো। সেখানে পৌঁছানোর পর আজমের মালিকানাধীন ড্যান্স ক্লাবগুলোতে আটকে তাদের ওপর চলতো যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন। ভুক্তভোগীদের মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা বললেও কোনো টাকাই দেয়া হতো না।

ভুক্তভোগী বেশ কিছু তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে আজম খান ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা গ্রেপ্তারকৃতদের ঘটনায় জড়িত থাকার সকল অডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছে। গত আট বছরে প্রায় এক হাজার তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে আজম খান।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আজম খানের সঙ্গে বাংলাদেশে ৫০ জনের মত দালাল সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তিনি ওই দালালদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অল্প বয়সী নারীদের বিদেশে ভালো চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখাতেন। পরে তাদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো দিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে তার বিভিন্ন হোটেলে চাকরি দিতেন। এক পর্যায়ে তাদের তার ড্যান্স বারে নাচার জন্য বলতেন। কোনো কোনো সময়ে তাদের হোটেলে ওই তরুণীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো।’

রাজি না হলে ভুক্তভোগীদের খেতে না দিয়ে মারধর করা হতো এবং কোনো কোনো সময় বৈদ্যুতিক শক দেয়া হতো বলেও জানান তিনি।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘অপরাধের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে তার সবকিছুর মধ্যেই আজম খান জড়িত।’

তার বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই সিআইডি বাদি হয়ে লালবাগ থানায় একটি মামলা করে বলেও জানান তিনি।

-কেএম

FacebookTwitter